০৪:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

অস্থির ডলার কখন স্থিতিশীল হবে?

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:০১:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২
  • / ৯৯৪ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

এই আগস্ট মাসে আমদানির জন্য ক্রেডিট লেটার খোলা কমেছে, রপ্তানি বেড়েছে, প্রবাসীদের আয়ও বেড়েছে। এতে দেশের বাজারে ডলারের চাহিদা কমেছে। এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ৯৫ টাকা হারে ডলার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে এখনও একটি বড় ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও টাকার মান বজায় রাখায় ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করছে, তার ৯৫ শতাংশই সরকারি কেনাকাটায় ব্যয় হচ্ছে। ফলে বেশি দামে ডলার কিনে বেসরকারি খাতের আমদানির খরচ দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে। তারপরও বিশ্ববাজারে ডলার প্রায় আগের মতোই শক্তিশালী। ডলার এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মুদ্রা। বিপরীতে, বেশিরভাগ প্রধান মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। রাশিয়ান রুবেল, ব্রাজিলিয়ান রিয়াল এবং সৌদি রিয়াল ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব মুদ্রাই ডলারের বিপরীতে গড়ে 10 শতাংশ হারায়। এ অবস্থায় দেশে মার্কিন ডলারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তা কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখন তুমুল আলোচনার বিষয়।

ডলারের দাম কত?

বাংলাদেশ ব্যাংক খোদ গত তিন মাসে ডলারের দাম প্রায় ৯ টাকা বাড়িয়েছে। আর ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রেট ৯৫ টাকা নির্ধারণ করায় দেশে আর্থিক খাতে পাঁচ ডলারের দর তৈরি হয়েছে। যেমন, প্রবাসী আয় আনতে ব্যাংকগুলো এখন প্রতি ডলারে ১০৫-১০৬ টাকা পর্যন্ত অফার দিচ্ছে। রপ্তানি বিল অর্থায়নের ক্ষেত্রে ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ১০১ টাকা থেকে ১০২ টাকা এবং আমদানিকারককে কিনতে হচ্ছে ১০৪ টাকা থেকে ১০৫ টাকায়। আর খোলা বাজারে স্থিতিশীলতা না থাকায় ডলারের দাম বেড়েছে ১১৫ টাকায়। টাকা

আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম কোথায় পৌঁছাবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গবেষণা নেই। ফলে সময়োপযোগী নীতি গ্রহণ করা যায়নি। ডলারের বাজার এখনও প্রথাগত উপায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে হঠাৎ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে মুদ্রার মান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি, কৌশল ও সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলো</em>কে বলেন, ডলারের বাজার পরিস্থিতি দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান পরিষ্কার নয়। এ বাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক নীতি নিতে পারছে না। , এটা কি নিচ্ছে তা ধরে রাখতে পারছে না। ফলে চাহিদা যোগানের পাশাপাশি এখন নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকার ওপর, ডলারের দাম কোথায় পৌঁছাবে।

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এখনো বাজারের চেয়ে ১০ টাকা কম দামে ডলার বিক্রি করছে তা বুঝতে পারছি না। অন্য কেউ এই দামে ডলার ট্রেড করছে না। ভয় ও চাপ দিয়ে এই বাজার স্থির করা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী নীতিমালা না নিলে শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হবে না।

ডলারের সংকট কেন?

এবার বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট পুরোপুরি এড়ানো যেত না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো ব্যবস্থা নিলে সংকটের তীব্রতা কমানো যেত। মূলত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে শিপিং। এতে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর একই সময়ে রপ্তানি আয় ৩৪ শতাংশ বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে ১৫ শতাংশ। মূলত প্রবাসী আয় বাড়লে দেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। কারণ রপ্তানি আয়ের ৭০-৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় কাঁচামাল আমদানিতে। ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না।

কোথায় ভুল

স্বাধীনতার পর থেকে 12 বছর ধরে, বাংলাদেশ পাউন্ডকে একটি মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসাবে বেছে নিয়েছিল। 1983 সাল থেকে, পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলার বেছে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশী মুদ্রার একটি ভাসমান বিনিময় হার মে 2003 থেকে প্রবর্তিত হয়েছিল। এই সময় থেকে মুদ্রার বিনিময় হার চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি ও তদারকির মাধ্যমে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অর্থের মূল্য হ্রাসের অর্থ হল অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে—এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারণা যে অর্থের মূল্য কৃত্রিমভাবে বজায় রাখা হয়।

আরও পড়ুন

ডলারের দাম যত বাড়ছে, রুপি কমছে কেন?

2018 সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন রপ্তানি খাতে তার অবস্থান বজায় রাখতে চীন তার মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছিল। এটাকে মুদ্রা যুদ্ধ বলা হতো যখন প্রায় সব প্রতিযোগী দেশ

নিউজটি শেয়ার করুন

অস্থির ডলার কখন স্থিতিশীল হবে?

আপডেট সময় ০৫:০১:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২

এই আগস্ট মাসে আমদানির জন্য ক্রেডিট লেটার খোলা কমেছে, রপ্তানি বেড়েছে, প্রবাসীদের আয়ও বেড়েছে। এতে দেশের বাজারে ডলারের চাহিদা কমেছে। এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ৯৫ টাকা হারে ডলার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে এখনও একটি বড় ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও টাকার মান বজায় রাখায় ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করছে, তার ৯৫ শতাংশই সরকারি কেনাকাটায় ব্যয় হচ্ছে। ফলে বেশি দামে ডলার কিনে বেসরকারি খাতের আমদানির খরচ দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে। তারপরও বিশ্ববাজারে ডলার প্রায় আগের মতোই শক্তিশালী। ডলার এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মুদ্রা। বিপরীতে, বেশিরভাগ প্রধান মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। রাশিয়ান রুবেল, ব্রাজিলিয়ান রিয়াল এবং সৌদি রিয়াল ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব মুদ্রাই ডলারের বিপরীতে গড়ে 10 শতাংশ হারায়। এ অবস্থায় দেশে মার্কিন ডলারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তা কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখন তুমুল আলোচনার বিষয়।

ডলারের দাম কত?

বাংলাদেশ ব্যাংক খোদ গত তিন মাসে ডলারের দাম প্রায় ৯ টাকা বাড়িয়েছে। আর ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রেট ৯৫ টাকা নির্ধারণ করায় দেশে আর্থিক খাতে পাঁচ ডলারের দর তৈরি হয়েছে। যেমন, প্রবাসী আয় আনতে ব্যাংকগুলো এখন প্রতি ডলারে ১০৫-১০৬ টাকা পর্যন্ত অফার দিচ্ছে। রপ্তানি বিল অর্থায়নের ক্ষেত্রে ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ১০১ টাকা থেকে ১০২ টাকা এবং আমদানিকারককে কিনতে হচ্ছে ১০৪ টাকা থেকে ১০৫ টাকায়। আর খোলা বাজারে স্থিতিশীলতা না থাকায় ডলারের দাম বেড়েছে ১১৫ টাকায়। টাকা

আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম কোথায় পৌঁছাবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গবেষণা নেই। ফলে সময়োপযোগী নীতি গ্রহণ করা যায়নি। ডলারের বাজার এখনও প্রথাগত উপায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে হঠাৎ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে মুদ্রার মান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি, কৌশল ও সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলো</em>কে বলেন, ডলারের বাজার পরিস্থিতি দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান পরিষ্কার নয়। এ বাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক নীতি নিতে পারছে না। , এটা কি নিচ্ছে তা ধরে রাখতে পারছে না। ফলে চাহিদা যোগানের পাশাপাশি এখন নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকার ওপর, ডলারের দাম কোথায় পৌঁছাবে।

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এখনো বাজারের চেয়ে ১০ টাকা কম দামে ডলার বিক্রি করছে তা বুঝতে পারছি না। অন্য কেউ এই দামে ডলার ট্রেড করছে না। ভয় ও চাপ দিয়ে এই বাজার স্থির করা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী নীতিমালা না নিলে শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হবে না।

ডলারের সংকট কেন?

এবার বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট পুরোপুরি এড়ানো যেত না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো ব্যবস্থা নিলে সংকটের তীব্রতা কমানো যেত। মূলত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে শিপিং। এতে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর একই সময়ে রপ্তানি আয় ৩৪ শতাংশ বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে ১৫ শতাংশ। মূলত প্রবাসী আয় বাড়লে দেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। কারণ রপ্তানি আয়ের ৭০-৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় কাঁচামাল আমদানিতে। ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না।

কোথায় ভুল

স্বাধীনতার পর থেকে 12 বছর ধরে, বাংলাদেশ পাউন্ডকে একটি মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসাবে বেছে নিয়েছিল। 1983 সাল থেকে, পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলার বেছে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশী মুদ্রার একটি ভাসমান বিনিময় হার মে 2003 থেকে প্রবর্তিত হয়েছিল। এই সময় থেকে মুদ্রার বিনিময় হার চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি ও তদারকির মাধ্যমে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অর্থের মূল্য হ্রাসের অর্থ হল অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে—এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারণা যে অর্থের মূল্য কৃত্রিমভাবে বজায় রাখা হয়।

আরও পড়ুন

ডলারের দাম যত বাড়ছে, রুপি কমছে কেন?

2018 সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন রপ্তানি খাতে তার অবস্থান বজায় রাখতে চীন তার মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছিল। এটাকে মুদ্রা যুদ্ধ বলা হতো যখন প্রায় সব প্রতিযোগী দেশ