১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

খেলা শুরু হয়, তবে মাঠে নয়, প্রতিপক্ষের ঘরে

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৪১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২
  • / ১০৪৫ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে লক্ষ্য করে বলেন, খেলা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ‘গেম’।

এতদিন আমরা জানতাম মাঠে রাজনীতির খেলা হয়। সরকার ও বিরোধী দলগুলো তাদের শক্তি ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে বড় বড় জনসভা করে। জনসভা থেকে বিরোধীদের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা ছাড়াও নিজস্ব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু এখন দেখছি, মাঠে খেলা হচ্ছে না। খেলাটি প্রতিপক্ষের বাড়িতে, অফিসে বা যেখানেই পারে সেখানে খেলা হয়।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলের দুই কর্মী হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। কিন্তু কর্মসূচি চলাকালে সোমবার লক্ষ্মীপুরের পুরাতন কাউয়াহাট এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা কবির পাটোয়ারীর নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আহত হন বিএনপি নেতার ভাই আরিফ চৌধুরী, ছেলে সাহরিয়ান চৌধুরী ও বাড়ির কেয়ারটেকার।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলার সময় তিনি সদর উপজেলায় আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন। হামলাকারীরা জানতেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বাড়িতে নেই। তারপরও সেখানে হামলা কাপুরুষোচিত।

বরিশালের গৌরনদীর ঘটনা আরও মর্মান্তিক। বিএনপি সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকতে পারে- এ খবর পেয়ে সোমবার স্থানীয় যুব নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। সেখানেও হামলা চালায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আহত চারজনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করলে সেখানেও হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ বানচাল করতে দ্বিমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এক. বিএনপি নেতার বাড়ি, অফিস বা জমায়েতে হামলা। দুই. বিএনপি যেখানে সমাবেশ ডেকেছে, সেখানে কর্মসূচি ঘোষণা করে হট্টগোল বন্ধ করুন।

মঙ্গলবার বরগুনার তালতলী, পটুয়াখালীর দুমকি, ফেনীর পরশুরামে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে তারা নিচের দিকে তাকায়নি, এর আগে কারা কর্মসূচি নিয়েছে, কারা প্রতিপক্ষের সমাবেশকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।

একই সময়ে ও স্থানে আওয়ামী লীগকে যে কর্মসূচি দিতে হবে, সেসব এলাকায় জায়গার অভাব আছে কি? এটাকে বলে লড়াই। তবে আওয়ামী লীগ মারামারি ছাড়াও কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বলেছেন, বিরোধী দল সভা-সমাবেশ করতে পারবে, তাতে বাধা দেওয়া হবে না, কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না; তারপর দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এই ভেবে দেশের মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিল। এমনকি বিএনপি নেতাকর্মীরা গণভবন ঘেরাও করতে আসলে তাদের বাধা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

তবে ভোলায় বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষ ও গুলিতে দুই কর্মী নিহত হয়েছেন।

বরগুনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনায় সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্তের আগেই সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বিএনপির দুই নেতার ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি খুঁজে পায়নি সরকার। এতে প্রমাণিত হয় যে, গুলি করে মারার চেয়ে লাঠিপেটা করা আরও গুরুতর অপরাধ। কার গুলিতে কে মারা গেল, বা কার লাঠিতে কে আহত হল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিহত বা আহত ব্যক্তি কোন দলের সদস্য তা গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রায় দেড় বছর বাকি। তারপরও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তাদের খেলা হবে, এখন দেখা যাচ্ছে তারা নিজেরাই খেলার নিয়ম মানছে না। মাঠের খেলা ঘরে তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

খেলা শুরু হয়, তবে মাঠে নয়, প্রতিপক্ষের ঘরে

আপডেট সময় ০৫:৪১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২

আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে লক্ষ্য করে বলেন, খেলা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ‘গেম’।

এতদিন আমরা জানতাম মাঠে রাজনীতির খেলা হয়। সরকার ও বিরোধী দলগুলো তাদের শক্তি ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে বড় বড় জনসভা করে। জনসভা থেকে বিরোধীদের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা ছাড়াও নিজস্ব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু এখন দেখছি, মাঠে খেলা হচ্ছে না। খেলাটি প্রতিপক্ষের বাড়িতে, অফিসে বা যেখানেই পারে সেখানে খেলা হয়।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলের দুই কর্মী হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। কিন্তু কর্মসূচি চলাকালে সোমবার লক্ষ্মীপুরের পুরাতন কাউয়াহাট এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা কবির পাটোয়ারীর নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আহত হন বিএনপি নেতার ভাই আরিফ চৌধুরী, ছেলে সাহরিয়ান চৌধুরী ও বাড়ির কেয়ারটেকার।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলার সময় তিনি সদর উপজেলায় আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন। হামলাকারীরা জানতেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বাড়িতে নেই। তারপরও সেখানে হামলা কাপুরুষোচিত।

বরিশালের গৌরনদীর ঘটনা আরও মর্মান্তিক। বিএনপি সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকতে পারে- এ খবর পেয়ে সোমবার স্থানীয় যুব নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। সেখানেও হামলা চালায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আহত চারজনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করলে সেখানেও হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ বানচাল করতে দ্বিমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এক. বিএনপি নেতার বাড়ি, অফিস বা জমায়েতে হামলা। দুই. বিএনপি যেখানে সমাবেশ ডেকেছে, সেখানে কর্মসূচি ঘোষণা করে হট্টগোল বন্ধ করুন।

মঙ্গলবার বরগুনার তালতলী, পটুয়াখালীর দুমকি, ফেনীর পরশুরামে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে তারা নিচের দিকে তাকায়নি, এর আগে কারা কর্মসূচি নিয়েছে, কারা প্রতিপক্ষের সমাবেশকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।

একই সময়ে ও স্থানে আওয়ামী লীগকে যে কর্মসূচি দিতে হবে, সেসব এলাকায় জায়গার অভাব আছে কি? এটাকে বলে লড়াই। তবে আওয়ামী লীগ মারামারি ছাড়াও কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বলেছেন, বিরোধী দল সভা-সমাবেশ করতে পারবে, তাতে বাধা দেওয়া হবে না, কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না; তারপর দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এই ভেবে দেশের মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিল। এমনকি বিএনপি নেতাকর্মীরা গণভবন ঘেরাও করতে আসলে তাদের বাধা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

তবে ভোলায় বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষ ও গুলিতে দুই কর্মী নিহত হয়েছেন।

বরগুনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনায় সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্তের আগেই সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বিএনপির দুই নেতার ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি খুঁজে পায়নি সরকার। এতে প্রমাণিত হয় যে, গুলি করে মারার চেয়ে লাঠিপেটা করা আরও গুরুতর অপরাধ। কার গুলিতে কে মারা গেল, বা কার লাঠিতে কে আহত হল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিহত বা আহত ব্যক্তি কোন দলের সদস্য তা গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রায় দেড় বছর বাকি। তারপরও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তাদের খেলা হবে, এখন দেখা যাচ্ছে তারা নিজেরাই খেলার নিয়ম মানছে না। মাঠের খেলা ঘরে তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা।