নতুন ডিএপি কার্যকর হওয়ার আগে নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া অপরিহার্য
- আপডেট সময় ০৯:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অগাস্ট ২০২২
- / ১৪৩০ বার পড়া হয়েছে
নতুন ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের আগে হঠাৎ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ভবন অনুমোদনের সংখ্যা বেড়েছে।
রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত বছরে প্রায় চার হাজার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু নতুন ড্যাপ বাস্তবায়নের আগে হঠাৎ করেই আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে অনুমোদনের সংখ্যাও বেড়েছে।
শিগগিরই নতুন ঢাকা মেট্রোপলিটন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলেই আবেদনের সংখ্যা বাড়ার কারণ বলে মনে করছেন রাজউক কর্মকর্তারা।
২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এটি 2035 সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
নতুন ড্যাপের খসড়া ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়। খসড়ায় জনসংখ্যার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে রাজউক এলাকায় আবাসিক ভবনের সর্বোচ্চ উচ্চতা আট তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর থেকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের আবেদন বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ভবন মালিকই উঁচু আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে চান। নতুন ড্যাপ কার্যকর হলে আশানুরূপ উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছেন ভবন মালিকরা। তাই, তারা জরুরি ভবন অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে, যাতে নতুন ডিএপি কার্যকর হওয়ার আগেই কাঙ্খিত উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যায়।
নতুন ড্যাপ তৈরির জন্য ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজউক থেকে প্রাপ্ত নির্মাণ অনুমোদনের সংখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজউক এলাকায় বছরে গড়ে চার হাজার ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৬১২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
করোনার সময় দেশে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ ছিল। তা সত্ত্বেও রাজুতে ভবন অনুমোদনের আবেদন ব্যাপক হারে বেড়েছে।
2021 সালে, 10,032টি বিল্ডিং অনুমোদিত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই ছিল আবাসিক ভবন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৬টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে রাজউক।
নতুন ড্যাপ কার্যকর হওয়ায় আগের মতো পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১০ সালে পাস করা ডিএপি বাতিল করা হয়েছে নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপনে। তবে ২০১০ সালের ড্যাপের আলোকে যেসব কার্যক্রম হয়েছে সেগুলোকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ড্যাপে বহুতল ভবন নির্মাণের নিয়ম বাতিল করা হয়েছে।
ড্যাপ মূলত একটি মাস্টার প্ল্যান। এতে পুরো রাজউক এলাকায় ভূমি ব্যবহারসহ পরিকল্পিত নগরায়নের বিভিন্ন কৌশলের কথা বলা হয়েছে। এসব কৌশল ছাড়াও রাজউকের ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত অন্যান্য নিয়মকানুন ড্যাপে উল্লেখিত ভূমি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে।
এ ছাড়া কেউ ভবন নির্মাণের অনুমতির জন্য আবেদন করলে শুরুতেই ড্যাপ-সংক্রান্ত জমির শ্রেণি যাচাই করা হয়। ফলে ড্যাপের কোনো এলাকা বা প্লটে আবাসিক ভবনের সর্বোচ্চ উচ্চতা আট তলা নির্ধারণ করা হলে আইনত সেখানে তলা বাড়ানো সম্ভব ছিল না।
নতুন ড্যাপে বহুতল ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কৌশল বাতিল করা হয়েছে। তবে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (FAR) নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত, একটি প্লটে নির্মাণ করা ভবনের আকার বা উচ্চতা FAR এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
ভাল মানের নাগরিক পরিষেবা সহ এলাকা, পার্ক বা খোলা জায়গা, প্লটের পাশে প্রশস্ত রাস্তা, উচ্চ FAR মান রয়েছে।
এবং যেসব এলাকায় রাস্তা সরু এবং নাগরিক পরিষেবার মান তুলনামূলকভাবে খারাপ, সেসব এলাকায় এফএআর মান কম বলে মনে করা হয়।
বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক এফএআরের কারণে পুরান ঢাকা ও গুলশানে প্লট ও পাশের রাস্তার আকার একই হলেও একই উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। আগে রাস্তা ও প্লটের আকার একই হলে উভয় এলাকায় সমান আয়তন বা উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, নতুন ড্যাপে ভবনের উচ্চতা পরিবর্তন করা হলেও যারা আগে অনুমোদন নিয়েছেন তারা অনুমোদন সনদ ও নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে পারবেন। নতুন ডিএপি কার্যকর হওয়ার আগে যারা নির্মাণের অনুমোদন নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ড্যাপে এলাকাভিত্তিক এফএআর নির্ধারণের কারণে কোনো কোনো এলাকায় ভবনের উচ্চতা অনেক কমে যাবে, আবার কোনো কোনো এলাকায় কমবে। সামান্য তবে ড্যাপে গৃহীত কৌশলটি সার্বিকভাবে ঢাকা শহরের জন্য ইতিবাচক। রাজউক সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে ঢাকা শহর টেকসই ও বাসযোগ্য হবে।