ফেসবুক জুড়ে শান-এর পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল
- আপডেট সময় ০৬:০৭:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১২৯৫ বার পড়া হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ শাওন প্রধান যুবদলের কর্মী বলে দাবি করছে বিএনপি। অপরদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাওন যুবলীগের কর্মী দাবি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শাওন প্রধানের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং যুবদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এছাড়া শাওনের ফেসবুক আইডি চেক করে দেখা গেছে, সে নিজেকে যুব কর্মী বলে পরিচয় দিত।
শাওন প্রধান যুবলীগের সদস্য নন বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী। শাওন তার চাচাতো ভাই নিহত সাহেব আলীর ছেলে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল দাবি করেছেন, নিহত শাওন যুবদলের কর্মী নয়, আওয়ামী লীগ নেতার ভাগ্নে।
তবে শাওন প্রধান যুবলীগের সদস্য নন বলে নিশ্চিত করেছেন তার চাচা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাক্তবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী। শাওন তার চাচাতো ভাই মৃত সাহেব আলীর ছেলে।
গতকাল রাত ১০টায় সদর উপজেলার বক্তাবলীতে শাওনের বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে শওকত আলী বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
শওকত আলী বলেন, শাওন যুবলীগের কর্মী নয়, যুবদলের কর্মীও নয়। তিনি কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। যুবদলের কর্মী হয়ে থাকলে, আজকের (বৃহস্পতিবার) মিছিলে গেছে, আমি জানি না।’
এ সময় যুবদলের মিছিলের সামনের সারিতে থাকা শাওনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে শওকত আলী ছবিটি শাওনের বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ছবিতে শাওনকে দেখা যাচ্ছে। এই ছবি মুছে ফেলা যাবে না.
যুবলীগের ওই কর্মী শাওন দাবি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সম্পর্কে বলেন, যারা এসব বলছেন, তারা সঠিক তথ্য জানেন না।
এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি তাকে নিজেদের কর্মী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সুবিধা হবে। তবে আমি বলব, আমার সন্তান মারা গেছে। তার পরিবার যেন কোনো প্রতিশোধের শিকার না হয়। এ পরিবারের লোকজন যেন আর কোনো ঝামেলায় না পড়ে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিচার হোক।’
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শওকত আলীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের শাওনের বাড়ির সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। শওকত আলী দাবি করেন, তারা লাশ দাফনের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সেখানে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপি যাতে তার লাশ নিয়ে কোনো ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।’ এ সময় সেখানে বিএনপির কোনো স্থানীয় নেতাকে দেখা যায়নি। এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় তিন ছাত্রলীগ নেতা। , দুই ব্যবসায়ী, শাওনের চাচা, বন্ধুসহ অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সবাই জানান, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা পুরো এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় তিন ছাত্রলীগ নেতা, দুই ব্যবসায়ী, শাওনের চাচা ও বন্ধুসহ অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেন। তারা সবাই জানান, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শাওন স্থানীয় জেলে দলের নেতা সলিমুল্লাহ হৃদয়, যুবদল নেতা আমীর বেপারী, শাহ আলী ও মহসিন বেপারীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি বাকতাবলী ওয়ার্ড যুবদলের ১নং সাধারণ সম্পাদক পদে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শাওন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমানের অনুসারী ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাওনের এক চাচা BD OPEN NEWS
কে বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত যে শাওন একজন যুব সদস্য ছিলেন। তবে সব কিছু বলা যায় না। তুমি কি বুঝতে পেরেছো? অনেক কিছু বলা নিষেধ।
শাওনের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তার ফেসবুক আইডি থেকে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। ‘শাওন আহমেদ (রাজা)’ নামে তার ফেসবুক আইডির বায়োতে শাওন লিখেছেন, ‘নগর/ফতুল্লা থানা যুবদল জিন্দাবাদের ঘর্মাক্ত রাস্তার কর্মী/সাক্ষীর চেয়ে বড় কোনো পদ নেই।’
৩১ মে শাওনের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও যুবদল নেতা সাদিকুর রহমানের একটি ছবি শেয়ার করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘গভীর রাতের ভোট চোরদের বলুন, ২০২৩ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব, ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল নারায়ণগঞ্জ জেলা।
এ ছাড়া শাওনের (রাজা প্রধান) নামে বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ও পোস্টারে সেখানে দেওয়া দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। পোস্টারে সে নিজেকে ফতুল্লা যুবদলের কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ গতকাল BD OPEN NEWS
কে বলেন, শাওন যুবদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আমার সাথে তার অনেক ছবি আছে। শাওন প্রধান নাম হলেও রাজনীতিতে তিনি রাজা প্রধান নামেই পরিচিত ছিলেন।
গতকাল পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর শাওনকে ছবি ও ভিডিও পাবটিতে দেখা গেছে।