০১:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

হত্যার ঘটনা আড়াল করতে চুরির মামলা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২
  • / ১৩০১ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

আশঙ্কা করেন তিনি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি চুরির মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন। মামলার বাদী শেখ মো. আবদুর রউফ একজন আইনজীবী। মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ বলছে, চুরির মামলা স্থির। সাবেক স্ত্রীকে হত্যার তথ্য গোপন করতে আবদুর রউফ বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

২০১১ সালের ৬ জুন শাহবাগ থানায় মামলাটি হয়। মামলায় আবদুর রউফ অভিযোগ করেন, তিনি তার সাবেক স্ত্রীর চালিশায় যোগ দিতে খুলনায় গিয়েছিলেন। ঢাকায় বাসায় ফিরে দেখেন, মূল্যবান কাগজপত্র, পাঁচ লাখ টাকা ও এক বাক্স স্বর্ণালংকার গায়েব। ঘরের চাবি। আলী মোল্লা (৩৫) নামে এক ব্যক্তির কাছে তা ছেড়ে দিয়েছিলেন মহসিন।

মামলায় মহাসিনসহ তার পরিবারের ছয়জনকে আসামি করা হয়। আবদুর রউফ বিবৃতিতে বলেন, মাহাসিন তার ফার্ম ‘দ্য লয়ার্স অ্যান্ড জুরিস্ট’-এর ম্যানেজার। তিনি তার ছেলেদের একজন শিক্ষকও ছিলেন। তার বাড়িতেই থাকতেন মহাসিন। এমনকি তার বাবা-মা এবং বোনদেরও সেই বাড়িতে অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল।

কেন এই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মৌদুত হাওলাদারBD OPEN NEWS

>কে বলেন, পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। আব্দুর রউফের চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ পাঁচবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবারই বাদী রাজি হননি। আবদুর রউফ বাদী হয়ে সাবেক স্ত্রী সালমা হত্যার মামলাও করেন। সেখানে তিনি হত্যার জন্য সালমার আত্মীয় ও বিবাহ নিবন্ধকসহ আটজনকে আসামি করেন। সেখানে চুরির মামলার আসামি মহাসিনকেও অভিযুক্ত করা হয়। আদালতে দেখা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাহফুজুল হক ভূঁইয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে মামলাটি তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) হীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক ও চম্পক চক্রবর্তী এবং পরিদর্শক আরিফুর রহমান সরদার ও আবু মাহমুদ কাওসার। প্রতিবেদনে পুলিশ জানায়, বাদী ‘কাল্পনিক, বানোয়াট, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদী কেন মিথ্যা মামলা করেছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। তাদের মতে, মামলার বাদী আব্দুর রউফের সাবেক স্ত্রী সালমা জেসমিন (লিপি) ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল খুন হন। ওই মামলার ‘সন্দেহভাজন’ আসামি আব্দুর রউফ। চুরি মামলার আসামি মহাসিন দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে গৃহশিক্ষক ছিলেন। সালমা হত্যার তথ্য মহাসিন দিতে পারে এমন আশঙ্কায় আব্দুর রউফ তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলায় জড়ান।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১১ বছর আগের হত্যা মামলার তদন্ত করে প্রথম আলো। জানা গেছে, আবদুর রউফ তার সাবেক স্ত্রী সালমাকে হত্যার ঘটনায় মামলাও করেছেন। সেখানে তিনি হত্যার জন্য সালমার আত্মীয় ও বিবাহ নিবন্ধকসহ আটজনকে আসামি করেন। সেখানে চুরির মামলার আসামি মহাসিনকেও অভিযুক্ত করা হয়।

এদিকে চুরির মামলার ১৫ দিন আগে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মহাসিন। আবদুর রউফ তাকে মামলায় জড়ানোর

কি হয়েছে সালমা জেসমিনের?

নথি অনুযায়ী, সালমা তার স্বামী আব্দুর রউফকে তালাক দিয়ে ২০১১ সালে হত্যার মাস দুয়েক আগে খুলনায় চলে আসেন। সেখানে তিনি প্রথমে তার বড় ভাইয়ের বয়রার বাড়িতে এবং পরে তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুমের সোনাডাঙ্গার বাড়িতে যান।

খুলনায় প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন সালমা। 11 এপ্রিল, তিনি হাঁটতে বেরিয়েছিলেন এবং আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। ওই রাতেই সালমার ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুম সোনাডাঙ্গা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজীবাছা নদীর একটি ঘেরের পাশে উলচর নামক স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

সালমা হত্যার ঘটনায় তার মা মনিরা বেগমের দায়ের করা মামলার জবানবন্দিতে ওই ঘটনার আগের ও পরের কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মনিরা বেগম আদালত ও পুলিশ সদর দপ্তরে আরও কিছু তথ্য দেন।

২০১১ সালের ১২ এপ্রিল বটিয়াঘাটা থানায় দায়ের করা মামলায় মনিরা বেগম লিখেছেন, ১৯৯২ সালে আবদুর রউফের সঙ্গে সালমার বিয়ে হয়। তখন তিনি সহকারী জজ ছিলেন। তাদের তিন ছেলে। আবদুর রউফ ২০০০ সালে চাকরি ছেড়ে আইন পেশায় যোগ দেন। এরপর স্বামীকে নিয়ে কাকরাইলের ৭৩ ইস্টার্ন কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের বাসায় যান সালমা। মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের ঝগড়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাস আগে সালমা একবার তার পরিবারকে খুলনায় গিয়েছিলেন। 15 দিন থেকে তিনি আবার তার স্বামীর কাছে আসেন। পরে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সালমা তার বড় ভাই বোয়ারের বাড়িতে চলে যান। সালমা জানান, তিনি তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন।

১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সালমা তার ফোন বাসায় রেখে হাঁটতে বের হন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মনিরা বেগমের মুঠোফোনে ফোন করে জানান, উলচরে এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে। লাশের কাছ থেকে মনিরা বেগমের নম্বর পাওয়া গেছে। লাশটি ছিল সালমার। লাশের বুকে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগ থেকে মনিরা বেগমের মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়।

এ কারণে আবদুর রউফকে সন্দেহ হয়

মনিরা বেগম

নিউজটি শেয়ার করুন

হত্যার ঘটনা আড়াল করতে চুরির মামলা

আপডেট সময় ০৫:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২

আশঙ্কা করেন তিনি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি চুরির মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন। মামলার বাদী শেখ মো. আবদুর রউফ একজন আইনজীবী। মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ বলছে, চুরির মামলা স্থির। সাবেক স্ত্রীকে হত্যার তথ্য গোপন করতে আবদুর রউফ বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

২০১১ সালের ৬ জুন শাহবাগ থানায় মামলাটি হয়। মামলায় আবদুর রউফ অভিযোগ করেন, তিনি তার সাবেক স্ত্রীর চালিশায় যোগ দিতে খুলনায় গিয়েছিলেন। ঢাকায় বাসায় ফিরে দেখেন, মূল্যবান কাগজপত্র, পাঁচ লাখ টাকা ও এক বাক্স স্বর্ণালংকার গায়েব। ঘরের চাবি। আলী মোল্লা (৩৫) নামে এক ব্যক্তির কাছে তা ছেড়ে দিয়েছিলেন মহসিন।

মামলায় মহাসিনসহ তার পরিবারের ছয়জনকে আসামি করা হয়। আবদুর রউফ বিবৃতিতে বলেন, মাহাসিন তার ফার্ম ‘দ্য লয়ার্স অ্যান্ড জুরিস্ট’-এর ম্যানেজার। তিনি তার ছেলেদের একজন শিক্ষকও ছিলেন। তার বাড়িতেই থাকতেন মহাসিন। এমনকি তার বাবা-মা এবং বোনদেরও সেই বাড়িতে অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল।

কেন এই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মৌদুত হাওলাদারBD OPEN NEWS

>কে বলেন, পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। আব্দুর রউফের চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ পাঁচবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবারই বাদী রাজি হননি। আবদুর রউফ বাদী হয়ে সাবেক স্ত্রী সালমা হত্যার মামলাও করেন। সেখানে তিনি হত্যার জন্য সালমার আত্মীয় ও বিবাহ নিবন্ধকসহ আটজনকে আসামি করেন। সেখানে চুরির মামলার আসামি মহাসিনকেও অভিযুক্ত করা হয়। আদালতে দেখা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাহফুজুল হক ভূঁইয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে মামলাটি তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) হীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক ও চম্পক চক্রবর্তী এবং পরিদর্শক আরিফুর রহমান সরদার ও আবু মাহমুদ কাওসার। প্রতিবেদনে পুলিশ জানায়, বাদী ‘কাল্পনিক, বানোয়াট, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদী কেন মিথ্যা মামলা করেছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। তাদের মতে, মামলার বাদী আব্দুর রউফের সাবেক স্ত্রী সালমা জেসমিন (লিপি) ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল খুন হন। ওই মামলার ‘সন্দেহভাজন’ আসামি আব্দুর রউফ। চুরি মামলার আসামি মহাসিন দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে গৃহশিক্ষক ছিলেন। সালমা হত্যার তথ্য মহাসিন দিতে পারে এমন আশঙ্কায় আব্দুর রউফ তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলায় জড়ান।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১১ বছর আগের হত্যা মামলার তদন্ত করে প্রথম আলো। জানা গেছে, আবদুর রউফ তার সাবেক স্ত্রী সালমাকে হত্যার ঘটনায় মামলাও করেছেন। সেখানে তিনি হত্যার জন্য সালমার আত্মীয় ও বিবাহ নিবন্ধকসহ আটজনকে আসামি করেন। সেখানে চুরির মামলার আসামি মহাসিনকেও অভিযুক্ত করা হয়।

এদিকে চুরির মামলার ১৫ দিন আগে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মহাসিন। আবদুর রউফ তাকে মামলায় জড়ানোর

কি হয়েছে সালমা জেসমিনের?

নথি অনুযায়ী, সালমা তার স্বামী আব্দুর রউফকে তালাক দিয়ে ২০১১ সালে হত্যার মাস দুয়েক আগে খুলনায় চলে আসেন। সেখানে তিনি প্রথমে তার বড় ভাইয়ের বয়রার বাড়িতে এবং পরে তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুমের সোনাডাঙ্গার বাড়িতে যান।

খুলনায় প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন সালমা। 11 এপ্রিল, তিনি হাঁটতে বেরিয়েছিলেন এবং আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। ওই রাতেই সালমার ভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুম সোনাডাঙ্গা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরদিন বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজীবাছা নদীর একটি ঘেরের পাশে উলচর নামক স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

সালমা হত্যার ঘটনায় তার মা মনিরা বেগমের দায়ের করা মামলার জবানবন্দিতে ওই ঘটনার আগের ও পরের কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মনিরা বেগম আদালত ও পুলিশ সদর দপ্তরে আরও কিছু তথ্য দেন।

২০১১ সালের ১২ এপ্রিল বটিয়াঘাটা থানায় দায়ের করা মামলায় মনিরা বেগম লিখেছেন, ১৯৯২ সালে আবদুর রউফের সঙ্গে সালমার বিয়ে হয়। তখন তিনি সহকারী জজ ছিলেন। তাদের তিন ছেলে। আবদুর রউফ ২০০০ সালে চাকরি ছেড়ে আইন পেশায় যোগ দেন। এরপর স্বামীকে নিয়ে কাকরাইলের ৭৩ ইস্টার্ন কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের বাসায় যান সালমা। মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের ঝগড়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাস আগে সালমা একবার তার পরিবারকে খুলনায় গিয়েছিলেন। 15 দিন থেকে তিনি আবার তার স্বামীর কাছে আসেন। পরে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সালমা তার বড় ভাই বোয়ারের বাড়িতে চলে যান। সালমা জানান, তিনি তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন।

১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সালমা তার ফোন বাসায় রেখে হাঁটতে বের হন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মনিরা বেগমের মুঠোফোনে ফোন করে জানান, উলচরে এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে। লাশের কাছ থেকে মনিরা বেগমের নম্বর পাওয়া গেছে। লাশটি ছিল সালমার। লাশের বুকে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগ থেকে মনিরা বেগমের মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়।

এ কারণে আবদুর রউফকে সন্দেহ হয়

মনিরা বেগম