০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এত দ্রুত ‘পানি উঠতে দেখিনি’, সারারাত ঘরে পানির গ্লাস

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
  • / ১১১৮ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

ঘরে উঠেছে গ্লাস পানি। এখনো পানি বাড়ছে। দাঁড়াতে না পেরে শাহজাহান মিয়া তার স্ত্রী ও ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রতিবেশীর দোতলা ভবনের ছাদে যান।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের টুকেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান জানান, গত বুধবার বিকেল থেকে তাদের বাড়িতে পানি আসতে শুরু করে। সেই রাতে ঘরে হাঁটু পানি উঠেছিল। তারা তখনও বাড়িতেই ছিল। বৃহস্পতিবার সারাদিন এভাবে চলে তারা। কিন্তু রাতে এক ধাক্কায় পানি উঠে ঘোলা হয়ে যায়। শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হন তিনি।

ঘরে উঠেছে গ্লাস পানি। এখনো পানি বাড়ছে। দাঁড়াতে না পেরে শাহজাহান মিয়া তার স্ত্রী ও ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রতিবেশীর দোতলা ভবনের ছাদে যান।

সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় চরম মাত্রার বন্যার আশঙ্কা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে, 80 শতাংশ এলাকা এখন উজানের ঢালে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বা মোবাইল ফোনের সংযোগ নেই।

উজানে ভাটা আসে সবচেয়ে বেশি বৃহস্পতিবার রাতে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) অনুসারে, সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে একদিনে 962 মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা 122 বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দারা হঠাৎ করেই এই ঢালে পথ হারিয়ে ফেলেছেন। পরিস্থিতি বর্ণনা করে ৫৫ বছর বয়সী শাহজাহান মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলো</em>কে বলেন, জীবনে এত দ্রুত পানি বাড়তে দেখিনি।

শুক্রবার সিলেটের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। বানভাসি মানুষ জানান, শুধু পানি বাড়ছে। তাই বাড়ির কেউ নিরাপদ বোধ করে না। এ অবস্থায় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। নৌকার অভাবে অনেকেই নিরাপদ স্থানে যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই বাড়িতে মাচা তৈরি করতে হচ্ছে একরকম। তাদের কেউ কেউ দিনের বেলায় আশ্রয় নিয়েছে। পরে অবশ্য তারা নৌকায় ধান ছেড়ে বিভিন্ন উচ্চতায় বসতি স্থাপন করে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার এলাকায় আমেনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় মো. পঞ্চাশ বছর বয়সী আমেনা বেগম তার ছয় বছরের নাতিকে কোলে নিয়ে অসহায়ভাবে ফিরে তাকাচ্ছে তার ডুবে যাওয়া বাড়ির দিকে। তারপর অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে বজ্রপাত হয়। যখন তিনি তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন তিনি তার ঘর বন্যার কথা বলতে বলতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারপর শুধু চোখ মুছে। বৃষ্টির জলের সাথে তার গালে গড়িয়ে পড়া কান্নার রেখাও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

দশ মিনিট পর আমেনা বলল, “সব শেষ। বাড়িটা ডুবে গেল! জিনিসপত্র ভেসে উঠছে। কী খাব, কোথায় থাকব?’ এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না। কয়েকটা কান্নাকাটি করে হাঁটা দিলেন বাড়ির দিকে। জলমগ্ন রাস্তার সামনে।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে আমেনার সঙ্গে হাঁটু পানি। সিলেট নগরীতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আমেনার মতো অনেককে সারাদিন এই সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই টুকেরবাজার ও আশপাশের অন্তত ১০টি বন্যা কবলিত গ্রামের শত শত মানুষ তাদের পরিবারসহ পায়ে হেঁটে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধরা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছিলেন। অনেকের কোলে ছিল বিভিন্ন বয়সের শিশু। কারও কারও মাথায় বস্তা ও কাপড়ের বান্ডিল ছিল। কেউ কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছিল। অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে পানিতে হাঁটতে হাঁটতে কেউ কেউ শীতে কাঁপতে থাকেন

জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা হায়দার রুবেল (৪১) জানান, প্রায় একদিনের ব্যবধানে তাদের বাড়িতে পানি উঠেছিল। ফলে পরিবারের ১৫ সদস্য সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি পায়ে হেঁটে চলে যান। তবে তার সাথে ছোট বাচ্চা থাকায় সে ধীরে ধীরে এবং সাবধানে হাঁটছে। সকাল ৭টায় সদর উপজেলার জাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক দিয়ে টুকেরবাজারে পৌঁছায় দুপুর ১২টায়।

বন্যা কবলিত মানুষের হাহাকার আর হাহাকার শুরু হয়েছে। চুলা তলিয়ে যাওয়ায় শুক্রবার অনেক বাড়িতে রান্না হয়নি। অনেকেই খাদ্য সংকটে পড়েছেন। পানীয় জলের সংকটও তীব্র হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের অধিকাংশ এলাকায় দুর্ভোগ তীব্র হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও অনাহারে রয়েছে।

সিলেটের উপজেলা ছাড়াও নগরীর ২০ থেকে ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোটান, জতারপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও ঘাসিটুলা এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে ভাসছে আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

সোবহানীঘাটে অসংখ্য দোকানপাট আর

নিউজটি শেয়ার করুন

এত দ্রুত ‘পানি উঠতে দেখিনি’, সারারাত ঘরে পানির গ্লাস

আপডেট সময় ০৫:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২

ঘরে উঠেছে গ্লাস পানি। এখনো পানি বাড়ছে। দাঁড়াতে না পেরে শাহজাহান মিয়া তার স্ত্রী ও ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রতিবেশীর দোতলা ভবনের ছাদে যান।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের টুকেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান জানান, গত বুধবার বিকেল থেকে তাদের বাড়িতে পানি আসতে শুরু করে। সেই রাতে ঘরে হাঁটু পানি উঠেছিল। তারা তখনও বাড়িতেই ছিল। বৃহস্পতিবার সারাদিন এভাবে চলে তারা। কিন্তু রাতে এক ধাক্কায় পানি উঠে ঘোলা হয়ে যায়। শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হন তিনি।

ঘরে উঠেছে গ্লাস পানি। এখনো পানি বাড়ছে। দাঁড়াতে না পেরে শাহজাহান মিয়া তার স্ত্রী ও ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রতিবেশীর দোতলা ভবনের ছাদে যান।

সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় চরম মাত্রার বন্যার আশঙ্কা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে, 80 শতাংশ এলাকা এখন উজানের ঢালে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বা মোবাইল ফোনের সংযোগ নেই।

উজানে ভাটা আসে সবচেয়ে বেশি বৃহস্পতিবার রাতে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) অনুসারে, সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে একদিনে 962 মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা 122 বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দারা হঠাৎ করেই এই ঢালে পথ হারিয়ে ফেলেছেন। পরিস্থিতি বর্ণনা করে ৫৫ বছর বয়সী শাহজাহান মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলো</em>কে বলেন, জীবনে এত দ্রুত পানি বাড়তে দেখিনি।

শুক্রবার সিলেটের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। বানভাসি মানুষ জানান, শুধু পানি বাড়ছে। তাই বাড়ির কেউ নিরাপদ বোধ করে না। এ অবস্থায় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। নৌকার অভাবে অনেকেই নিরাপদ স্থানে যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই বাড়িতে মাচা তৈরি করতে হচ্ছে একরকম। তাদের কেউ কেউ দিনের বেলায় আশ্রয় নিয়েছে। পরে অবশ্য তারা নৌকায় ধান ছেড়ে বিভিন্ন উচ্চতায় বসতি স্থাপন করে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার এলাকায় আমেনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় মো. পঞ্চাশ বছর বয়সী আমেনা বেগম তার ছয় বছরের নাতিকে কোলে নিয়ে অসহায়ভাবে ফিরে তাকাচ্ছে তার ডুবে যাওয়া বাড়ির দিকে। তারপর অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে বজ্রপাত হয়। যখন তিনি তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন তিনি তার ঘর বন্যার কথা বলতে বলতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারপর শুধু চোখ মুছে। বৃষ্টির জলের সাথে তার গালে গড়িয়ে পড়া কান্নার রেখাও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

দশ মিনিট পর আমেনা বলল, “সব শেষ। বাড়িটা ডুবে গেল! জিনিসপত্র ভেসে উঠছে। কী খাব, কোথায় থাকব?’ এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না। কয়েকটা কান্নাকাটি করে হাঁটা দিলেন বাড়ির দিকে। জলমগ্ন রাস্তার সামনে।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে আমেনার সঙ্গে হাঁটু পানি। সিলেট নগরীতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আমেনার মতো অনেককে সারাদিন এই সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই টুকেরবাজার ও আশপাশের অন্তত ১০টি বন্যা কবলিত গ্রামের শত শত মানুষ তাদের পরিবারসহ পায়ে হেঁটে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধরা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছিলেন। অনেকের কোলে ছিল বিভিন্ন বয়সের শিশু। কারও কারও মাথায় বস্তা ও কাপড়ের বান্ডিল ছিল। কেউ কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছিল। অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে পানিতে হাঁটতে হাঁটতে কেউ কেউ শীতে কাঁপতে থাকেন

জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা হায়দার রুবেল (৪১) জানান, প্রায় একদিনের ব্যবধানে তাদের বাড়িতে পানি উঠেছিল। ফলে পরিবারের ১৫ সদস্য সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি পায়ে হেঁটে চলে যান। তবে তার সাথে ছোট বাচ্চা থাকায় সে ধীরে ধীরে এবং সাবধানে হাঁটছে। সকাল ৭টায় সদর উপজেলার জাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক দিয়ে টুকেরবাজারে পৌঁছায় দুপুর ১২টায়।

বন্যা কবলিত মানুষের হাহাকার আর হাহাকার শুরু হয়েছে। চুলা তলিয়ে যাওয়ায় শুক্রবার অনেক বাড়িতে রান্না হয়নি। অনেকেই খাদ্য সংকটে পড়েছেন। পানীয় জলের সংকটও তীব্র হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের অধিকাংশ এলাকায় দুর্ভোগ তীব্র হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও অনাহারে রয়েছে।

সিলেটের উপজেলা ছাড়াও নগরীর ২০ থেকে ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোটান, জতারপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও ঘাসিটুলা এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে ভাসছে আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

সোবহানীঘাটে অসংখ্য দোকানপাট আর