০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

কারওয়ান বাজার এলাকায় কে কিভাবে ডাকাতি করে

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:০১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ অগাস্ট ২০২২
  • / ১০৬৭ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও আশপাশে দিনে অন্তত তিন থেকে পাঁচটি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তেজগাঁও এলাকার ২৫ ভাসমান শিশু তিনটি পেশাদার দল নিয়ে চুরি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চক্রের সদস্যরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে রহমান ম্যানশন, তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল, সাতরাস্তা ও এফডিসির কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেটের সামনে লুটপাট চালায়। চক্রের মাথা এক পলক নিশানা স্থির করল। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

ডাকাতরা বাসের জানালার পাশে বসা যাত্রীদের মোবাইল ফোন, পথচারী, রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। কারওয়ান বাজারে আসা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক থেকেও মালামাল ছিনিয়ে নেয় দলটি। সম্প্রতি কারওয়ান বাজার থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিশা আক্তারের মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় কারওয়ান বাজার থেকে কারওয়ান গ্যাংয়ের ২৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃত চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানায়, গত তিন মাসে কারওয়ান বাজার ও আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক চুরি-ডাকাতি করেছে।

দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিবেদক জামাল উদ্দিন গত ৪ আগস্ট কারওয়ান বাজার অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। ডাকাতরা তার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ব্যাগে নগদ ৭ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ও একটি ব্যাঙ্ক কার্ড ছিল।

জামাল উদ্দিন প্রথম আলো</em>কে বলেন, ‘ফার্মগেটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দলটি আমার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাতির মামলা করেছি। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ আমার ব্যাগ উদ্ধার ও জড়িত ডাকাতদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

কারওয়ান বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কারওয়ান বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। এ এলাকায় ব্যাপক লোক সমাগমের কারণে প্রতিদিনই লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ নির্দিষ্ট স্থানে বসে টহল দেয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের নজরদারি করে। যেখানে পুলিশের উপস্থিতি নেই সেখানে তারা ডাকাতি করে। ডাকাতি বন্ধে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের।

কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চুরি-ছিনতাইয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করেন না। মামলা না হওয়ায় পুলিশ জানতে পারে না। ফলে মালামাল উদ্ধার হয় না। তেজগাঁও থানার একটি সূত্র জানায়, গত জুন মাসে তেজগাঁও এলাকায় মোট ৬টি মামলা হয়েছে। এবং জুলাই মাসে একটি মাত্র মামলা ছিল।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান BD OPEN NEWS

বলেন, ডাকাতির ঘটনা কম। তবে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক মোবাইল ফোন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ জানায়, এক মাসে প্রায় ৪০টি মোবাইল উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয়।

ডিএমপি সূত্র আরও জানায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগে। এ বিভাগে ডাকাতির অধিকাংশ মামলাও হয়।

25 ভাসমান শিশু অপহরণ

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, কারওয়ান বাজার কেন্দ্রিক ডাকাতির সঙ্গে তিনটি চক্র জড়িত। লোকমান হোসেন একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তার দল 6 থেকে 7 সদস্য নিয়ে গঠিত। গত ২৬ জুলাই ডিবির তেজগাঁও বিভাগ লোকমান হোসেনসহ তার গ্যাংয়ের আটজনকে গ্রেপ্তার করে। আর দুটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কালু ও আলমগীর হোসেন। কালুসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তবে আলমগীর ও তার গ্যাং সদস্যরা এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের সঙ্গে ভাসছে অন্তত ২৫ শিশু। তারা তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন বস্তিতে এবং রেললাইনের ওপর ট্রেনের বগিতে বসবাস করে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত এসব ভাসমান শিশুদের তালিকা তৈরি করেছে ডিবি।

এ প্রসঙ্গে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসান মুহতারিম প্রথম আলো</em>কে বলেন, কারওয়ান বাজারে ডাকাতি বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, লোকমান কারওয়ান গত ১২ বছর ধরে বাজার এলাকায় ডাকাতি করে আসছে। সে মূলত বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে পুলিশের ওপর নজরদারি করত এবং তার গ্যাং সদস্যদের ডাকাতি করত। চুরি-ডাকাতি ছাড়াও এই চক্রের সদস্যরা বাজারে আসা কাফেলা থেকে মালামাল লুট করে। কারওয়ান বাজার ও এফডিসি এলাকায় বেশিরভাগ সময় ডাকাতি করে তারা।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, আলমগীরের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮ জন কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ও সাতরাস্তা মোড় এলাকায় ডাকাতি করে। তারা মূলত রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে থামিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।

কালুর নেতৃত্বে দলটি চুরি-ডাকাতি ছাড়াও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তারা রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে ডাকাতি করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কারওয়ান বাজার এলাকায় কে কিভাবে ডাকাতি করে

আপডেট সময় ০৮:০১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ অগাস্ট ২০২২

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও আশপাশে দিনে অন্তত তিন থেকে পাঁচটি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তেজগাঁও এলাকার ২৫ ভাসমান শিশু তিনটি পেশাদার দল নিয়ে চুরি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চক্রের সদস্যরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে রহমান ম্যানশন, তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল, সাতরাস্তা ও এফডিসির কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেটের সামনে লুটপাট চালায়। চক্রের মাথা এক পলক নিশানা স্থির করল। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

ডাকাতরা বাসের জানালার পাশে বসা যাত্রীদের মোবাইল ফোন, পথচারী, রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। কারওয়ান বাজারে আসা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক থেকেও মালামাল ছিনিয়ে নেয় দলটি। সম্প্রতি কারওয়ান বাজার থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিশা আক্তারের মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় কারওয়ান বাজার থেকে কারওয়ান গ্যাংয়ের ২৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃত চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানায়, গত তিন মাসে কারওয়ান বাজার ও আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক চুরি-ডাকাতি করেছে।

দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিবেদক জামাল উদ্দিন গত ৪ আগস্ট কারওয়ান বাজার অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। ডাকাতরা তার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ব্যাগে নগদ ৭ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ও একটি ব্যাঙ্ক কার্ড ছিল।

জামাল উদ্দিন প্রথম আলো</em>কে বলেন, ‘ফার্মগেটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দলটি আমার হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাতির মামলা করেছি। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ আমার ব্যাগ উদ্ধার ও জড়িত ডাকাতদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

কারওয়ান বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কারওয়ান বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। এ এলাকায় ব্যাপক লোক সমাগমের কারণে প্রতিদিনই লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ নির্দিষ্ট স্থানে বসে টহল দেয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের নজরদারি করে। যেখানে পুলিশের উপস্থিতি নেই সেখানে তারা ডাকাতি করে। ডাকাতি বন্ধে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের।

কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চুরি-ছিনতাইয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করেন না। মামলা না হওয়ায় পুলিশ জানতে পারে না। ফলে মালামাল উদ্ধার হয় না। তেজগাঁও থানার একটি সূত্র জানায়, গত জুন মাসে তেজগাঁও এলাকায় মোট ৬টি মামলা হয়েছে। এবং জুলাই মাসে একটি মাত্র মামলা ছিল।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান BD OPEN NEWS

বলেন, ডাকাতির ঘটনা কম। তবে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক মোবাইল ফোন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ জানায়, এক মাসে প্রায় ৪০টি মোবাইল উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয়।

ডিএমপি সূত্র আরও জানায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগে। এ বিভাগে ডাকাতির অধিকাংশ মামলাও হয়।

25 ভাসমান শিশু অপহরণ

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, কারওয়ান বাজার কেন্দ্রিক ডাকাতির সঙ্গে তিনটি চক্র জড়িত। লোকমান হোসেন একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তার দল 6 থেকে 7 সদস্য নিয়ে গঠিত। গত ২৬ জুলাই ডিবির তেজগাঁও বিভাগ লোকমান হোসেনসহ তার গ্যাংয়ের আটজনকে গ্রেপ্তার করে। আর দুটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কালু ও আলমগীর হোসেন। কালুসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তবে আলমগীর ও তার গ্যাং সদস্যরা এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের সঙ্গে ভাসছে অন্তত ২৫ শিশু। তারা তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন বস্তিতে এবং রেললাইনের ওপর ট্রেনের বগিতে বসবাস করে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত এসব ভাসমান শিশুদের তালিকা তৈরি করেছে ডিবি।

এ প্রসঙ্গে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসান মুহতারিম প্রথম আলো</em>কে বলেন, কারওয়ান বাজারে ডাকাতি বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, লোকমান কারওয়ান গত ১২ বছর ধরে বাজার এলাকায় ডাকাতি করে আসছে। সে মূলত বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে পুলিশের ওপর নজরদারি করত এবং তার গ্যাং সদস্যদের ডাকাতি করত। চুরি-ডাকাতি ছাড়াও এই চক্রের সদস্যরা বাজারে আসা কাফেলা থেকে মালামাল লুট করে। কারওয়ান বাজার ও এফডিসি এলাকায় বেশিরভাগ সময় ডাকাতি করে তারা।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, আলমগীরের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮ জন কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ও সাতরাস্তা মোড় এলাকায় ডাকাতি করে। তারা মূলত রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে থামিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।

কালুর নেতৃত্বে দলটি চুরি-ডাকাতি ছাড়াও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তারা রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে ডাকাতি করেছে।