কৃষকের পাশে দুই বন্ধুর ‘ফার্মার’
- আপডেট সময় ০৬:৩৫:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
- / ৯০৭ বার পড়া হয়েছে
গত সাড়ে তিন বছরে ১৯টি জেলায় ১৬ হাজার কৃষককে ঋণ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গবাদি পশু পালন ও শস্য উৎপাদনের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আইফার্মার ছয়টি বিভাগের ৯৬টি বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করছে।
দুই বন্ধু বড় হয়েছেন ঢাকায়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার পর দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। আপনি কাজ করার সময় পরিকল্পনা করুন – নিজে কিছু করুন। শুরুতে নগরীর ছাদ বাগান করতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। মূলধন ৩০ লাখ টাকা, একটি রুম ও একটি ল্যাপটপ। সাত মাস কাজ করার পর তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি বাগান পরিকল্পনা নিয়ে বেশিদূর যেতে পারবেন না। পরিকল্পনা না করে তিনি সরাসরি কৃষকদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
দুই বন্ধু ফাহাদ ইফাজ ও জামিল এম আকবর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সাফল্যের মুখ দেখেন। গত সাড়ে তিন বছরে তাদের স্টার্টআপ ‘ইফামার’ ১৯টি জেলার ১৬ হাজার কৃষককে ঋণ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গবাদি পশু পালন ও শস্য উৎপাদনের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আইফার্মার ছয়টি বিভাগের ৯৬টি বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। তাদের নিবন্ধিত কৃষকরাও সরাসরি ব্যাংক ঋণ পেতে শুরু করেছে।
ইফারমার গল্প শুনতে গত বুধবার রাজধানীর গুলশানে তাদের অফিসে গিয়ে দেখি সাজানো গোছানো অফিস। উন্মুক্ত পরিবেশ। কর্মীদের জন্য নিচের ক্যাফেটেরিয়া। দ্বিতীয় তলায় কাজ করছেন শ্রমিকরা। পাশের একটি ছোট ঘরে, বড় টেবিলের দুপাশে ইফমারের দুই কান্ডারী ফাহাদ ও জামিল ল্যাপটপে কাজ করছিল। কিছুক্ষণ পর কথাবার্তা জমে গেল।
যাইহোক, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় এই দুই বন্ধুর একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইভেন্ট হয়েছিল।
সংগঠন গড়ে তোলে। তখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। তাই পড়ালেখা শেষ করে ফাহাদ প্রথমে সুইস কন্টাক্ট নামে একটি বিদেশি কোম্পানিতে যোগ দেন। এরপর তিনি কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে জেলা থেকে জেলায় ঘুরেছেন। পরে বিশ্বব্যাঙ্কে চাকরি নেন। আড়াই বছর কাজ করার পর তিনি কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের হয়ে মিয়ানমারে কৃষকদের জন্য কাজ করতে যান। অন্যদিকে জামিল প্রথমে টাইগার আইটিতে যোগ দেন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রকল্পে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি গ্রাফিক পিপলে যোগ দেন এবং বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত কোম্পানিতে কারিগরি সেবা প্রদান করেন।
ফাহাদ বলেন, ‘আমি যখন কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের হয়ে মায়ানমার এবং পরে কম্বোডিয়ায় কাজ করতে যাই, দেখলাম বাংলাদেশের মতো সে দেশের কৃষকদেরও ঋণ সহায়তা পেতে সমস্যা হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যও ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যায় চার থেকে পাঁচ হাতে। এ কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তখনই আমার মাথায় কৃষকের জন্য কাজ করার চিন্তা আসে। বাংলাদেশেও কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করলেও কিছুই করা হচ্ছে না।
আরেকটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন ফাহাদ। তারপর একটা চাকরি পেল। তিনি বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গার এক কৃষকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। একপর্যায়ে খামারি জানতে চান আমরা হাঁসের খামারে অর্থায়ন করছি কি না। তাহলে আমাদের প্রকল্পে হাঁসের খামারের জন্য ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। পকেট থেকে ১৫ হাজার টাকা দিলাম। ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ফিরে এলাম। ঢাকায় ফিরে ঘটনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পাঁচ-সাত মাস পর কৃষক মোবাইলে ফোন করে বলেন, হাঁস চাষ করে লাভ হয়েছে। তিন হাজার টাকা লাভসহ পুরো টাকা ফেরত দিতে চান। টাকা নিলাম না। কিন্তু আমার মাথায় চিন্তা এলো, আপনি মাত্র ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে লাভ করেছেন। তারাও সেই লাভের ভাগ নিতে চায়। তার মানে কিছু ব্যবসা আছে। ‘
ফাহাদের মাথায় প্রথমে ইফারমার আইডিয়া আসে। তখন জামিল ঢাকায় আর ফাহাদ মায়ানমারে। দুই দুই দেশে, তাতে কী। প্রতিদিন দুই বন্ধু ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলত। এবার পরিকল্পনা শেষে মাঠে নামার পালা। জামিল 2016 সালের মার্চ মাসে চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যবসার মূলধন বাড়াতে তিনি তার শখের গাড়িও বিক্রি করেন। বললেন, ‘আমার প্রথম গাড়ি। বিক্রি করা খুব কঠিন ছিল। তারপরও বিক্রি করেছি। কারণ, আমরা নতুন কিছু করতে চেয়েছিলাম।
প্রথমে তারা লালমনিরহাটের পাটগ্রামে যান। তিনি কৃষক ও পশুপালকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি ৪০ জন কৃষকের জন্য একটি গরু কেনার সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য প্রয়োজন ২০ লাখ টাকা। কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে? ভাবনায় পড়ে গেল দুই যুবক। হাতে টাকা নেই। কি করা যায় ভেবে দু-তিনজন বন্ধু ব্যাংকে গেল। ব্যাংক তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। এরপর ফাহাদ ও জামিল অনলাইনে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দেখুন, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে একাধিক স্টার্টআপ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কৃষকদের টাকা ধার দিয়েছে। সাহস পেয়েছেন দুই উদ্যোক্তা। সে তার পরিকল্পনার কথা তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের কাছে জানায়। এছাড়া এক বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ মুনাফাসহ আসল টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কিন্তু অনেকেই বিশ্বাস করেননি।
ফাহাদ বলেন, ‘আমরা যখন পরিকল্পনার কথা বলছিলাম, তখন সবাই ভাবতে শুরু করেছিল এটা ডেসটিনির মতো কিছু। কিন্তু আমাদের এম