ছয় দফা দিবস ও গনবিচ্ছিন্ন সরকার
- আপডেট সময় ০৫:২৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
- / ১৬৮২ বার পড়া হয়েছে
আজ ৭ই জুন; ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এইদিনে ছয় দফার সমর্থনে ডাকা হরতালের মধ্য দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয়; পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১১ জন। ছয় দফাকে বলা হয় এই জাতির মুক্তির সনদ; রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্যের মজ্জা ভেঙ্গে দিতেই ছয় দফা প্রস্তাব এনেছিল আওয়ামী লীগ। লাহোর প্রস্তাবের আলোকে প্রনীত সেই ছয় দফা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে পরিণতি লাভ করেছিল, বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিপত্র ছিল ছয় দফা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও হাবীবুর রহমান মিলে যৌথভাবে ছয় দফার খসড়া প্রনয়ন করেন ১৯৪০ সালে গৃহীত ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের আলোকে। দুই পৃষ্ঠাব্যাপী ছয় দফা দাবিনামার মুখবন্ধ লিখেছেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। পরবর্তী পাতায় ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম “৬ দফা দাবি” পেশ করেন যা পরবর্তীতে ‘ছয় দফাঃ আমাদের বাঁচার দাবি’ শীর্ষক পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত কার্যত অরক্ষিত হয়ে পড়ে; এর পেছনে দায়ী ছিল সামরিক ক্ষেত্রে অসম বন্টন। ছয় দফার মাধ্যমে এই অসম বন্টনকে সমূলে উচ্ছেদ করে সাম্য ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। আবার, অর্থনৈতিক খাতে পূর্বের টাকা দেদারসে পাচার হতো পশ্চিমে; সেখানে গড়ে উঠতো শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোলকাতার জমিদারদের মত পূর্বের ধনে পোদ্দারি করা পশ্চিম কখনো পূর্বের দিকে ফিরে তাকায়নি। কার্যতঃ দেশ একচ্ছত্রভাবে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর কব্জায় ছিল; পূর্ব পাকিস্তানী জনগনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, তাদেরকে মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ফলে, নিজেদের বাঁচা-মরার লড়াইকেও তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ইত্যাদি অ্যাখ্যা দিতে থাকে। ফলশ্রুতিতে, বাঙালী মুসলমানের অধিকার আদায়ে, তাদের মানবিক মর্যাদা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে, মানুষে মানুষে সমতা বিধানে, সর্বোপরি সামাজিক সুবিচার কায়েমের লক্ষ্যে ছয় দফা প্রস্তাব করা হয়েছিল।
আজ ছয় দফা দিবস পালন করা হলেও, এর স্পিরিট জীবিত নেই। বরং ঘটা করে ছয় দফা দিবস পালনকারীরাই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মত ফ্যাসিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তারাও মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। দেশজুড়ে বেইনসাফি ও অরাজকতা কায়েম করেছেন। জনগণ নিজেদের দাবি নিয়ে রাজপথে নামলে সেখানেও গুলি চলে, নাগরিকরা খুন, গুম ও গনহত্যার শিকার হয় হাজারে হাজারে। তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের শক্তির দাবিদাররা ছয় দফাকে এভাবেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছেন। অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনরত নাগরিক ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। ছয় দফার সাথে এ এক মহাবিদ্রূপ বলে মনে করে এবি পার্টি।
এবি পার্টি, আজকের এই দিনে ছয় দফার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে আর একদলীয় ও অনির্বাচিত সরকারকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে যে স্বাধীনতার জয়ন্তী, ছয় দফা এগুলো কোনকিছুই তাদের মুখে মানায় না। পাশাপাশি, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে এবি পার্টি।