প্রতি পরিবারে ৩৩ হাজার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ক্ষতি
- আপডেট সময় ০৪:০২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১৬৫৬ বার পড়া হয়েছে
প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ২০ বছরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি পরিবার গড়ে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৯১ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলের শরীয়তপুরে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গড়ে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩০ টাকা। আর বরেন্দ্র অঞ্চলে গড়ে ৩৩ হাজার ৭৬৯ টাকা লোকসান হয়েছে।
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। গবেষণায় সংগঠনটি শরীয়তপুর এলাকার শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসডিএস), রাজশাহীর মাসাউস এবং সাতক্ষীরার বাদাবন সংঘের তিনটি আঞ্চলিক বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সহায়তা নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনটি অঞ্চলের 200 এবং 600 পরিবারের উপর গবেষণাটি করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। সিপিআরডির নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহা এ ফলাফল উপস্থাপন করেন।
দক্ষিণে আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হল কৃষিজমি ও বাসস্থানের ক্ষতি
ফলাফল তুলে ধরে সিপিআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুদ্দোহা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হলো কৃষি জমি ও বসতি নষ্ট হওয়া। এতে ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া 29.7 শতাংশ গৃহস্থালির ক্ষতির কারণে, 8.4 শতাংশ গৃহপালিত পশুর কারণে, 5.8 শতাংশ গৃহস্থালির মালামালের ক্ষতির কারণে এবং 3.4 শতাংশ মাছ ধরার সরঞ্জাম, গাছপালা, রান্নাঘর এবং টয়লেটের ক্ষতির কারণে মারা গেছে।
ওই এলাকার 100% মানুষ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে এবং 2.5% পরিবারে প্রাণহানি বেড়েছে। 32.5 শতাংশ পরিবারের শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে, 14.5 শতাংশ পরিবারে বাল্যবিবাহ ঘটছে।
নদী ভাঙনে প্রতি পরিবারে গড়ে ২৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে
অন্যদিকে শুধু নদীভাঙনে শরীয়তপুর অঞ্চলে বিশ বছরে প্রতিটি পরিবারের গড়ে ২৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। গত ২০ বছরে ওই এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে গবাদি পশু-পাখির মৃত্যুর হিসাবে ওই এলাকায় পরিবার প্রতি গড় আর্থিক পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩০ টাকা।
এই অঞ্চলের 10.5 শতাংশ মানুষ কাজের সুযোগ (দৈনিক মজুরি) হ্রাস করেছে। অভিবাসনের কারণে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ পরিচয় সংকটে ভুগছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৭৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, উৎসবে মেতে ও মনের আনন্দ কমে গেছে।
নদী ভাঙ্গন সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট অভাবের কারণে উত্তরদাতাদের 35% স্কুল ছেড়ে দেয়। 26 শতাংশ পরিবার তাদের সন্তানদেরকে কাজে পাঠাতে বাধ্য হয় অর্থনীতিকে সচল রাখতে। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৯৯ শতাংশ পরিবারে রোগ বেড়েছে
গবেষণায় দেখা গেছে যে বরেন্দ্র অঞ্চলের 93% পরিবার পানীয় জলের সংকটে ভুগছে। অতিরিক্ত গরমের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের কর্মঘণ্টা কমে গেছে। ৪৮.৫ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন সময়ের জন্য বেকার। এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, 99.5 শতাংশ পরিবারে রোগের প্রকোপ বেড়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনের পর সিপিআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য, পানি, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মৌলিক অধিকার এবং মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়ান ফ্রাই বিষয়টি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানবাধিকার বিনষ্ট হচ্ছে এতে কোনো দ্বিমত নেই। এই গবেষণার ফলাফল তার আরেকটি প্রমাণ। মানবাধিকারের বঞ্চনার বিষয়ে আরও গবেষণা করা উচিত এবং প্রতিবেদনগুলিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, গণমাধ্যমে এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের মুখ থেকে বঞ্চনা ও অধিকার বঞ্চনার গল্প শোনা যায়। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এসডিএসের নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম, ম্যাসাউসের নির্বাহী পরিচালক মেরিনা মুর্মু, বাদাবন সংঘের নির্বাহী পরিচালক লিপি রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও স্টেকহোল্ডাররাও তাদের মতামত দেন।