মন্ত্রী বলেন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
- আপডেট সময় ০৬:৩৪:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২
- / ৯৩৯ বার পড়া হয়েছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের রসরাজ দাসকে প্রায় ছয় বছর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে ৫৭ ধারা সহ আইনের বেশ কিছু ধারা বাতিল করা হলেও রসরাজের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। কারণ 2016 সালে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুরানো অভিযোগের জন্য পুলিশ রসরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (গত বছরের ডিসেম্বরে) দাখিল করেছে। এই মামলার কারণে তিনি প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
রসরাজ জানান, আগে তাকে আদালতে হাজিরা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে হয়। একা ভ্রমণে খরচ হতো প্রায় ৬০০ টাকা। এখন মামলাটি চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এজন্য তাকে চট্টগ্রামে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। এক হাজিরার জন্য যাতায়াত, আবাসন ও আইনজীবীর খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা। একদিন মাছ না ধরে সংসার না চললে এভাবে মামলা করা প্রায় অসম্ভব।
মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মো
শনিবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রসরাজের মতো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আরও ছয় আসামি তাদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তারা হলেন ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুমা সরকার, মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল, কুমিল্লার শিক্ষক শংকর দেবনাথ, সুনামগঞ্জের সমাজসেবী ঝুমনা দাস, রংপুরের টিটু রায় ও জয়দেব শীল। পটুয়াখালী।
‘ভিকটিমস অব ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অ্যান্ড রিয়েল ক্রিমিনালস’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ভুক্তভোগী সহকারী অধ্যাপক রুমা সরকার জানান, তিনি কোনো ধর্মীয় উস্কানি দেননি। 2021 সালের 19 অক্টোবর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়ির দরজা ভেঙে দুই শিশুর সামনে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই দুই শিশুকে প্রতিবেশীর কাছে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় আড়াই মাস জেলে থাকার পর গত ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এ মামলার কারণে তিনি শিক্ষকতা পেশায় ফিরতে পারছেন না। নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের ঝুমন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। পটুয়াখালীর জয়দেব শীলকে ২০১৯ সালের মে মাসে গ্রেফতার করা হয়। ঝুমান দাস জানান, কারাগারে থাকা বন্দি ও বন্দিরা তাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি হামলার চেষ্টাও করেছিল। জয়দেব শীল জানান, মামলার কারণে তার লেখাপড়া হুমকির মুখে পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফা জব্বার বলেন, রাষ্ট্রের অসুবিধার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি এই রাষ্ট্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমি মনে করি এটা খুবই দুঃখজনক। এখানে যারা আছে তাদের সবার ভাগ্যই করুণ। একদিকে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তারা আইনের শিকার হওয়ায় আমরা এই আইনের পক্ষে কাজ করেছি। এই আইনে যারা হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ‘
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগকেই বেশি দায়ী করা হচ্ছে।
সভাপতিত্ব করেন একাত্তর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের ওপর মাসের পর মাস নিপীড়নের দায় সরকার এড়াতে পারেনি। যাদের জন্য আইন করা হয়েছে তাদের সুরক্ষার জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর প্রধানত সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মের অনুসারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার ব্যক্তিরা কোনো না কোনোভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে পুলিশের মনে গোঁড়ামি গ্রাস করেছে। প্রথমে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সাংসদ আরমা দত্ত বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ দিন দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটা খুবই কষ্টের বিষয়। রাষ্ট্রের স্বার্থে আইন করা হলেও এখন তা অনেকের ক্ষতি করছে। তিনি সরকারকে আইনটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
সাবেক যুগোস্লাভিয়ার (ICTY) জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাপস বল বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারীর কোনো ধারণা নেই।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রকৃত অপরাধীদের সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি আসিফ মুনির। মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেছেন মারুফ রসুল, একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং লেখক। মূল প্রবন্ধ অনুযায়ী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশে একটি সন্দেহজনক আইনে পরিণত হয়েছে। অনেক সরকার সমর্থক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সম্ভবত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি প্রোট কিনা তা নিয়ে সন্দিহান