যে কারণে ভারতীয় গোপন পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় নিন্দনীয়
- আপডেট সময় ০৬:১৭:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২
- / ১৩৩৫ বার পড়া হয়েছে
একটি ভারতীয় পরিবার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য রয়েছে।
কম্পিউটার সরঞ্জামের ব্যবসা দিয়ে শুরু। এরপর পারিবারিক ব্যবসায় ডালপালা মেলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, রেলপথ, খনিজ, বিমান পরিষেবা, আবাসন, মিডিয়া, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে।
তিন দশকেরও কম সময়ে, পরিবারের সদস্যরা অভিবাসী হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। তবে এই নাটকীয় উত্থান-পতনে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাজনীতিতে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। শুরু হয় নিন্দা। আবহাওয়া পরিবর্তন হলে পরিবারের সদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওই পরিবারের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে খুশি দক্ষিণ আফ্রিকানরা।
আমি গুপ্ত পরিবারের কথা বলছি। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে একসময় প্রভাবশালী পরিবারটি এখন দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত নিন্দনীয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় গুপ্ত পরিবারের নাটকীয় উত্থান-পতনের ইতিহাস জানতে আমাদের তিন দশক পিছিয়ে যেতে হবে।
সময়টা 1993। দক্ষিণ আফ্রিকা সবেমাত্র বর্ণবাদের কালো ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর থেকে তিন ভাই অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত এবং রাজেশ গুপ্তা (টনি গুপ্তা) দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখেন। তাদের বাবা শিবকুমার গুপ্ত ভেবেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ভবিষ্যতে আমেরিকার মতো উন্নত দেশ হবে। তাই তিনি তার তিন ছেলেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠিয়েছেন অনুগ্রহ ফেরাতে। এই কারণেই ‘জুপ্তাস’ শব্দটি, যা দুটি পরিবারকে এক করে, দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
গুপ্ত ভাইরা অভিবাসী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে সাহারা কম্পিউটারস নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা কম্পিউটার যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করে। তখন তারা দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করে।
কয়েক বছরের মধ্যে গুপ্ত ভাইরা খনি ও মিডিয়া ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। একের পর এক গোপন পারিবারিক ব্যবসা শক্তি, বিমান পরিষেবা, প্রযুক্তি, রেলপথ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। গুপ্ত রাজবংশের বিশাল সাম্রাজ্য দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়।
গুপ্ত পরিবারের সম্পদ
গুপ্ত পরিবারের সদস্যদের সম্মিলিত সম্পদ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। যাইহোক, আফ্রিকার বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ জোহানেসবার্গের JSE, 2016 সালে রিপোর্ট করেছে যে অতুল গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্তম ধনী ব্যক্তি। তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। অন্য ভাইদের তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজনীন তথ্য নেই।
জোহানেসবার্গে ‘সাহারা এস্টেট’ নামে গুপ্ত ভাইদের একটি অভিজাত প্রাসাদ রয়েছে। এই পরিবারের সদস্যরা সেখানে অন্তত চারটি প্রাসাদ সদৃশ বাড়িতে থাকতেন। প্রতিটি বাড়ির মূল্য ৩.৪ মিলিয়নের বেশি।
কেপটাউনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ছেলে মার্ক থ্যাচারের বাড়ি ছিল। এই বাড়িটি গুপ্ত ভাইরা কিনেছিলেন।
গুপ্ত ব্রাদার্সের সংগ্রহে বিশ্বের বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বেশ কয়েকটি গাড়ি এবং চার্টার্ড প্লেন রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের বিনিয়োগ ও সম্পদ রয়েছে।
গুপ্ত পরিবারের সদস্যরা তাদের বিলাসবহুল জীবন এবং সম্পদ নিয়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে পছন্দ করেন না। তাই এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য নেই।
আরও পড়ুন
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দক্ষিণ আফ্রিকার গোপন ভাইদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে
একটি ‘রাজকীয়’ বিয়ে
দক্ষিণ আফ্রিকার বিলাসবহুল সান সিটি রিসোর্টে 2013 সালে একটি রাজকীয় বিয়ের পার্টি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর দিল্লির ব্যবসায়ী আকাশ জাহাজগড়িয়া। পাত্রী ভেগা গুপ্তা। তিনি অজয়-অতুল-রাজেশ গুপ্তের বোনের মেয়ে।
বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলেন দুই শতাধিক অতিথি। প্রিটোরিয়ার কাছে ওয়াটারলুফ মিলিটারি এয়ারফিল্ড তাদের উঠা-নামা করতে ব্যস্ত ছিল। একের পর এক চার্টার্ড ফ্লাইট ছিল। বিমানবন্দর থেকে পুলিশি পাহারায় অতিথিদের কাফেলা চলে যায় রিসোর্টে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের জন্য বিমানবন্দরটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গোপন ভাইদের তা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা।
এই রাজকীয় বিয়ের পর গুপ্ত পরিবারের বিলাসবহুল জীবন ও সম্পদ নিয়ে গুজব ছড়াতে থাকে। গুপ্ত পরিবারের সদস্যদের বিশেষ রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের মধ্যেও জুমা দলকে সমালোচিত করা হয়েছে।
মিডিয়ার খোঁজে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে সাপটি। গুপ্ত পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমেছে।
জুমার সাথে বন্ধুত্ব
অভিবাসীরা গুপ্ত ভাইদের কোটিপতি হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে জুমা পরিবারের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের বিষয়টি সামনে আসে।
অভিযোগ, জুমুয়ার আশীর্বাদে গুপ্ত পরিবারের সাম্রাজ্য বিকাশ লাভ করে। এই কারণেই ‘জুপ্তাস’ শব্দটি, যা দুটি পরিবারকে এক করে, দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
জুমা 2009-2016 সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। পরে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তিনি এখন বন্দি জীবনযাপন করছেন।
2013 সালে ‘রাজকীয়’ বিয়ের পর জানা গেল জুমার স্ত্রী বাঙ্গি এনগেমার কাজ ছিল।