সুনামগঞ্জে বন্যায় ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে
- আপডেট সময় ০৪:১৯:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২
- / ১৬৩১ বার পড়া হয়েছে
ভয়াবহ এই বন্যায় সুনামগঞ্জে মানুষের ঘরবাড়ির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় এত ঘরবাড়ি এর আগে কখনো বিধ্বস্ত হয়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী, দরিদ্র মানুষ। বন্যার পানি কমলেও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের ঘরে ফিরতে পারেনি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৪৫,০২৬টি। এর মধ্যে ৪,৭৪৮টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. বুধবার সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ কার্যক্রমের প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীর হোসেন এ কথা উল্লেখ করেন। তবে বন্যা কমে গেলেই চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বাড়িতে কত টাকা লোকসান হয় এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন BD OPEN NEWS
কে বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে আগামী সপ্তাহে আমরা বরাদ্দ পেয়ে বাড়ি সংস্কারে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেওয়া শুরু করব। ‘
বন্যায় জেলার ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১,৮৪২টি গবাদি পশু মারা গেছে। এর মধ্যে ৪২২টি গরু, ৩৬টি মহিষ, ৬৯টি ছাগল ও ৫১৪টি ভেড়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যায় জেলার পুকুর থেকে ২৫ হাজার ২০৪টি মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১,৮৪২টি গবাদি পশু মারা গেছে। এর মধ্যে ৪২২টি গরু, ৩৬টি মহিষ, ৬৯টি ছাগল ও ৫১৪টি ভেড়া। এছাড়া বন্যায় ২৬ হাজার ৬০৫টি মুরগি ও ৯৮ হাজার ৭৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় এ পর্যন্ত জেলায় ৩৬৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু ও কালভার্ট এবং ৪টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি রয়েছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি কমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে।
বন্যায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাসেবী তহবিল থেকে নগদ ৫৫ লাখ টাকা ও গুঁড়ো দুধের প্যাকেট ৫০ হাজার টাকা এসেছে। প্রতিটি উপজেলায় বন্যার্তদের মাঝে এসব নগদ অর্থ ও উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত ১১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ২৮ হাজার বস্তা ১৪ কেজি খাদ্য সামগ্রী, ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে সাড়ে ছয় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নগদ, ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৮ প্যাকেট খাবার ও ২৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে আবারও পানি বাড়ছে
গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা চলছে। মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ২৬ জুন থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল। আবার নেমে আসছে। আবার পানি উঠতে শুরু করেছে। তিন দিনে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২ সেন্টিমিটার।
সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যায় সাড়ে চার লাখ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের ৯৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখনো বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি রয়েছে। কিছু মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। বৃষ্টির কারণে জলস্তর কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি থামলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।