৫৫টি বেসরকারি মেডিকেল স্কুলে কারা পাঠদান করছে তা অধিদপ্তর জানে না
- আপডেট সময় ০৯:৩৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জুন ২০২২
- / ১৪৪৪ বার পড়া হয়েছে
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগের নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রায় প্রতি বছরই নতুন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। দেশে চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার এটাই বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে ৬৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তথ্য প্রকাশ করেছে। ৫৫টি কলেজের জনবলের কোনো তথ্য নেই। দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বারবার অনুরোধ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এসব কলেজে কারা চিকিৎসা শিক্ষা দিচ্ছে তা অধিদপ্তর জানে না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন প্রথম আলো</em>কে বলেন, “সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষ। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হতে চলেছে। আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তথ্য ওয়েবসাইটে রেখেছি। যাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
কম শিক্ষক থাকার অর্থ পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা ছাড়াই চিকিৎসক তৈরি করা হচ্ছে। সম্ভবত একটি ফ্যাক্টর কেন তারা এত খারাপ করছে যে কিছু মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না।
দেশে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ১১৮টি। ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০। ৬৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৩৫৪টি। ৬টি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৪২৫টি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে বোঝা যায়, অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের তথ্য গোপন করতে চায়। তারা কতজন শিক্ষক আছেন তা বলতে চান না। মেডিকেল কলেজগুলোর জনবলের তথ্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ কলেজ তা দেয় না।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, মেডিকেল, নার্সিংসহ সব ক্ষেত্রেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজেও এই সংকট রয়েছে। সরকারকে শিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। “
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) যথাযথ চিকিৎসা জ্ঞান ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত নির্ধারণ করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ওই সংখ্যক শিক্ষক নেই।
১৭টি মেডিকেল কলেজ তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ঢাকার উত্তরা আধুনিক, আদ-দ্বীন মহিলা, ইবনে সিনা ও ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ও মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ, সেন্ট্রাল, কুমিল্লা সেন্ট্রাল, ময়নামতি ও ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া এবং নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ। কলেজ সিলেটে। ময়মনসিংহের কমিউনিটি ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরের ডায়াবেটিক সমিতি, খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক, সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী, টাঙ্গাইলের কুমুদিনী মহিলা ও মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেল কলেজ।
যদিও তালিকায় একাধিক মেডিকেল কলেজের নাম নেই যেগুলোর সুনাম রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত হিসেবে স্বীকৃত।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই কলেজে ১৫১ জন শিক্ষক রয়েছেন। তবে ওয়েবসাইটেও ভুল তথ্য রয়েছে। যেমন তিনটি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের সংখ্যা ১০-এর কম।
আপনি কতজন শিক্ষক চান?
BMDC বলছে প্রতি 10 জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন প্রভাষক এবং প্রতি 25 জন শিক্ষার্থীর জন্য 1 জন বিষয় শিক্ষক (সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক) থাকতে হবে। একটি কলেজ যেখানে প্রতি বছর 50 জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এবং পাঁচটি শিক্ষাবর্ষ রয়েছে তার কমপক্ষে 6 জন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। প্রতি শিক্ষাবর্ষে 100 জন শিক্ষার্থী থাকলে ওই মেডিকেল কলেজে 154 জন শিক্ষক থাকার কথা। যে ১৬ জন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক তথ্য দিয়েছেন, তাদের কেউই বিএমডিসির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেননি।
বিএমডিসি একটি আদর্শ পরিস্থিতির কথা বলে। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন কিছু পার্থক্য গ্রহণযোগ্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্ধেক বা কম শিক্ষক দিয়ে চিকিৎসা শিক্ষা চলতে পারে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ইসমাইল খান প্রথম আলো</em>কে বলেন, “কম শিক্ষক থাকার মানে হচ্ছে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা ছাড়াই চিকিৎসক তৈরি করা। তারা কেন এত খারাপ করছে তার একটি কারণ সম্ভবত এটি। কিছু মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না।