১০:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কুমিল্লায় নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২
  • / ৮৯৩ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা। কমিশন এই পরীক্ষায় শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। শুধু ব্যর্থই হয়নি, ভেঙেছে নতুন ইসির কোমরও। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত অল্পের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক প্রার্থী নিজামুল হক কায়সারও পেয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার ভোট। বিএনপির বিভক্তির কারণে সাক্কু যে পরাজিত হয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেভাবে জয়ী হয়েছেন তা ছিল অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বর্ষীয়ান নেতা এ কিউ এম বাহাউদ্দিন তার নিজের লোকদের মন জয় করতে অনেক কিছু করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধীদের হাতে তুলে দেন সমালোচনার অস্ত্র। কুমিল্লার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি, একজন এমপির ব্যক্তিগত আকাঙ্খায় জিতেছে। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্য বিভাজন ছিল। আফজাল খান ও বাহাউদ্দিনের বিরোধ অনেকবার আওয়ামী লীগের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আফজাল খান। তখন আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী একটি মহল প্রায় প্রকাশ্যে মনিরুল হক সাক্কুকে সমর্থন করে। তারা আফজালকে হারাতে বিএনপির সাক্কুকে টেনে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা। দলীয় কোন্দলে পড়ে নৌকার প্রার্থী। অন্য কথায়, আওয়ামী লীগ নয়, প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে প্রতিপত্তি ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ১৪ জন। আফজাল খানের মৃত্যুর পর কুমিল্লা ও আওয়ামী লীগে বাহাউদ্দিনের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এবার বাহাউদ্দিনের নিজের লোক আরফানুল হক রিফাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। রিফাতকে মনোনয়ন দেওয়া মাত্রই বাহাউদ্দিন সাক্কুকে ফেলে দেন। জয়ের জন্য মরিয়া ময়মন। শেষ পর্যন্ত এমপির আপন লোকজন জয়ী হলেও আওয়ামী লীগ হেরেছে। গুরুত্বহীন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয় আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা দূরে থাকলেও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারত। আর আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও দেশের রাজনীতির কোনো ক্ষতি হবে না।

বিতর্কের মধ্য দিয়ে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এই প্রথম কোনো আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো। কিন্তু দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি। রাষ্ট্রপতির সংলাপে যায়নি বিএনপি। তিনি সার্চ কমিটিতে নাম জমা দেননি। বিএনপি বলেছিল, এই নির্বাচন কমিশন হবে সরকারের অনুগত ও আজ্ঞাবহ। তাই আউয়াল কমিশন এক ধরনের গরমের আসনে বসেছে। বাংলাদেশের প্রায় সব নির্বাচন কমিশনেই ‘বাচল’ রোগ ছিল। নির্বাচন কমিশনই সবার আগে নানা অপ্রাসঙ্গিক, বিতর্কিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য বলে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। একই পথ অনুসরণ করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনারও। প্রাথমিকভাবে, তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেমন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কিকে লড়াই করার জন্য। তখন থেকেই তিনি তার সম্পর্কে কথা বলছেন। বিএনপির আস্থা অর্জনই তার বাড়াবাড়ির প্রধান কারণ- এটা বুঝতে কারও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি জাতিকে আশ্বস্তও করেছেন যে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে তিনি আজ রাতে ভোট দেবেন না। কিন্তু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, কাজ দেখতে চায়। কমিশনের নিরপেক্ষতা তার কাজের দ্বারা প্রমাণিত হয়। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সম্পন্ন করা। হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষা ছিল কুসিক নির্বাচন। নতুন সিইও নিজেকে যোগ্য এবং নিরপেক্ষ করার জন্য তার প্রথম পরীক্ষায় লড়াই করেছিলেন। এই নির্বাচনে বিএনপি কাগজে কলমে ছিল না, বাস্তবে ছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তারা ধানের শীষ তাক লাগিয়ে মগ, ঘড়ি, পাত্র প্রভৃতি প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কুমিল্লায় অবশ্য বিএনপির প্রার্থী একজন নয়, দুইজন। সাবেক মেয়র সাক্কু ছাড়াও আরেক বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারও শেষ পর্যন্ত লড়েছেন। তাই বিএনপি যাই বলুক না কেন, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বাস্তবে তারা ছদ্মবেশে নির্বাচনের মাঠে ভালোই আছেন।

কুসিক নির্বাচনের সময়ও বিএনপি মহাসচিব প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছেন। বিএনপির নতুন নির্বাচনী কৌশল এখন আর গোপন নেই। তারা নির্বাচন থেকে দূরে- এটা প্রমাণ করতে দলটি এখন বহিষ্কারের নাটক করছে। তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম মুক্তি পায় নারায়ণগঞ্জে। পরে

নিউজটি শেয়ার করুন

কুমিল্লায় নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে

আপডেট সময় ০৫:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা। কমিশন এই পরীক্ষায় শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। শুধু ব্যর্থই হয়নি, ভেঙেছে নতুন ইসির কোমরও। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত অল্পের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক প্রার্থী নিজামুল হক কায়সারও পেয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার ভোট। বিএনপির বিভক্তির কারণে সাক্কু যে পরাজিত হয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেভাবে জয়ী হয়েছেন তা ছিল অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বর্ষীয়ান নেতা এ কিউ এম বাহাউদ্দিন তার নিজের লোকদের মন জয় করতে অনেক কিছু করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধীদের হাতে তুলে দেন সমালোচনার অস্ত্র। কুমিল্লার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি, একজন এমপির ব্যক্তিগত আকাঙ্খায় জিতেছে। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্য বিভাজন ছিল। আফজাল খান ও বাহাউদ্দিনের বিরোধ অনেকবার আওয়ামী লীগের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আফজাল খান। তখন আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী একটি মহল প্রায় প্রকাশ্যে মনিরুল হক সাক্কুকে সমর্থন করে। তারা আফজালকে হারাতে বিএনপির সাক্কুকে টেনে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা। দলীয় কোন্দলে পড়ে নৌকার প্রার্থী। অন্য কথায়, আওয়ামী লীগ নয়, প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে প্রতিপত্তি ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ১৪ জন। আফজাল খানের মৃত্যুর পর কুমিল্লা ও আওয়ামী লীগে বাহাউদ্দিনের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এবার বাহাউদ্দিনের নিজের লোক আরফানুল হক রিফাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। রিফাতকে মনোনয়ন দেওয়া মাত্রই বাহাউদ্দিন সাক্কুকে ফেলে দেন। জয়ের জন্য মরিয়া ময়মন। শেষ পর্যন্ত এমপির আপন লোকজন জয়ী হলেও আওয়ামী লীগ হেরেছে। গুরুত্বহীন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয় আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা দূরে থাকলেও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারত। আর আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও দেশের রাজনীতির কোনো ক্ষতি হবে না।

বিতর্কের মধ্য দিয়ে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এই প্রথম কোনো আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো। কিন্তু দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি। রাষ্ট্রপতির সংলাপে যায়নি বিএনপি। তিনি সার্চ কমিটিতে নাম জমা দেননি। বিএনপি বলেছিল, এই নির্বাচন কমিশন হবে সরকারের অনুগত ও আজ্ঞাবহ। তাই আউয়াল কমিশন এক ধরনের গরমের আসনে বসেছে। বাংলাদেশের প্রায় সব নির্বাচন কমিশনেই ‘বাচল’ রোগ ছিল। নির্বাচন কমিশনই সবার আগে নানা অপ্রাসঙ্গিক, বিতর্কিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য বলে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। একই পথ অনুসরণ করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনারও। প্রাথমিকভাবে, তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেমন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কিকে লড়াই করার জন্য। তখন থেকেই তিনি তার সম্পর্কে কথা বলছেন। বিএনপির আস্থা অর্জনই তার বাড়াবাড়ির প্রধান কারণ- এটা বুঝতে কারও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি জাতিকে আশ্বস্তও করেছেন যে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে তিনি আজ রাতে ভোট দেবেন না। কিন্তু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, কাজ দেখতে চায়। কমিশনের নিরপেক্ষতা তার কাজের দ্বারা প্রমাণিত হয়। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সম্পন্ন করা। হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষা ছিল কুসিক নির্বাচন। নতুন সিইও নিজেকে যোগ্য এবং নিরপেক্ষ করার জন্য তার প্রথম পরীক্ষায় লড়াই করেছিলেন। এই নির্বাচনে বিএনপি কাগজে কলমে ছিল না, বাস্তবে ছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তারা ধানের শীষ তাক লাগিয়ে মগ, ঘড়ি, পাত্র প্রভৃতি প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কুমিল্লায় অবশ্য বিএনপির প্রার্থী একজন নয়, দুইজন। সাবেক মেয়র সাক্কু ছাড়াও আরেক বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারও শেষ পর্যন্ত লড়েছেন। তাই বিএনপি যাই বলুক না কেন, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বাস্তবে তারা ছদ্মবেশে নির্বাচনের মাঠে ভালোই আছেন।

কুসিক নির্বাচনের সময়ও বিএনপি মহাসচিব প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছেন। বিএনপির নতুন নির্বাচনী কৌশল এখন আর গোপন নেই। তারা নির্বাচন থেকে দূরে- এটা প্রমাণ করতে দলটি এখন বহিষ্কারের নাটক করছে। তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম মুক্তি পায় নারায়ণগঞ্জে। পরে