পানি সরে গেলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন
- আপডেট সময় ০৪:১৭:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
- / ৭১১ বার পড়া হয়েছে
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) রাতে বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি প্লাবিত হতে থাকে। প্রথমে বিলকিছ বেগম (৩৮) বাড়িতে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু পানি বাড়তে থাকায় ঘরে থাকাটাই দায় হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রাতে বৃষ্টিতে কোমর ভেঙে কলেজ ভবনে আশ্রয় নেন তিনি। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় তিনি খালি হাতে বাড়ি থেকে বের হন। এক সপ্তাহে ঘর থেকে পানি বের হলেও সুনামগঞ্জের সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন বিলকিচ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজে গিয়ে বিলকিচের সঙ্গে কথা হয়। “জল কমছে,” তিনি বলেন. কিন্তু ঘরের বেড়া, মেঝে ভেঙ্গে যাচ্ছে। হাতে টাকা নেই। বন্ধুরা, কারো কাছ থেকে ধার নেওয়ার জন্য। ঘরের কাজ সেরে বাড়ি যাব। ‘স্বামী ও সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার খুবই ছোট। স্বামী শাহ আলম ট্রাক চালাতেন। এখন তিনি অসুস্থ এবং কোনো কাজ করতে পারেন না। বড় ছেলে তফাজ্জুল হোসেন (১৫) গাড়ির গ্যারেজে কাজ করে সংসার চালায়।
বন্যায় বৃহস্পতিবার রাতে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের পার্শ্ববর্তী সুলতানপুর, গাংপাড় হাটি ও আশপাশের এলাকায় ৭৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ পুরুষই দিনমজুর। কেউ কেউ ধাক্কা মারেন রিকশা। তাদের অনেকেরই পানি ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু কিছু লোকের ঘর সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। কারো বাড়ির বেড়া ও মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেক আসবাব ও কাপড়। তাই তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। আবার কিছু মানুষের ঘরে এখনো পানি জমে আছে।
আজ বিকেলে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ পরিবার এখনো বাড়ি ফেরেনি। এসব পরিবারের সদস্যরা থাকেন দুটি কক্ষে। মিলনায়তনের মেঝেতে ভাগাভাগি করে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে পরিবারগুলো। অন্য রুমটি বেঞ্চগুলির সাথে ভাগ করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে চলছে রান্না-খাওয়া। সুলতানপুরের দেলোয়ার হোসেন (৩৫) বলেন, ঘর থেকে পানি বের হলেও এখন যাওয়ার সুযোগ নেই। বাড়ির একপাশ ধসে পড়েছে। সব আসবাবপত্র ভেসে গেছে। ঘরে কোন জিনিসপত্র নেই। দেলোয়ার হোসেনের মা খুদিজা বেগম (৫৪) বলেন, এ পরিবেশে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর। এখনও সেখানে. পানি কমে গেলেও বাড়ির ভেতরে পা রাখা সম্ভব নয়। একদিকে বেড়া নেই, হাওর দেখা যায়। এই বাড়িতে থাকা কঠিন।
শ্রমিক শরীফ উদ্দিন (৪০) বলেন, আয় নেই, আমি বেকার। এখন বাড়ি সংস্কারের টাকা কোথায় পাব। সরকার সহযোগিতা না করলে ঘরের কাজ করা সম্ভব নয়।
শহরতলীর ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সদর হাসপাতাল, ময়নপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে।
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হাসাননগর এলাকার বাসিন্দা রুকন মিয়া (৪৮) জানান, হাওরে তার পুরো বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত। রুকন মিয়া বললেন, “এটা খাও না। ঘর বানাইমু কিলা। আমি স্কুল ছেড়ে দেব। এখন পথ ছাড়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
শুধু শহর নয়, গ্রামেও একই অবস্থা। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। সদর উপজেলার মইনপুর গ্রামের বাসিন্দা মর্তুজা আলী বলেন, মানুষ এখন বাড়ির কথা ভাবছে। মানুষের টাকা নেই। সরকারের সাহায্য ছাড়া বাড়ি যাওয়া যায় না।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, বন্যার্তদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন তাদের ঘর সংস্কারের জন্য সাহায্য প্রয়োজন। পৌর এলাকায় অন্তত তিন হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই বাড়ি মেরামতে সাহায্য করতে আসছেন।
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জানান, তার উপজেলায় চার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনও প্রায় এক হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকেই ফিরতে পারছেন না। বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, তারা এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন। এটা আরও বাড়বে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পানি কমলেই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে পুরো ছবি এখনই পাওয়া যাচ্ছে না। পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা পাবে।