হাতে পবিত্র কোরআন লেখার গল্প শোনালেন তাসনিম
- আপডেট সময় ০৬:২৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
- / ১২০৮ বার পড়া হয়েছে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে। তারপর মৃত্যুর খবর বাড়তে থাকে। তখন অবস্থা এমন ছিল যে কেউ মারা গেলে কাছেও যেতে পারত না।
জারিন তাসনিম (দিয়া) মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব দেখে বিষণ্নতায় ভোগেন।
এসব থেকে দূরে থাকতে কিছু করতে চান তাসনিম। ছোটবেলা থেকেই হাতের লেখা ভালো ছিল। তিনি তড়িঘড়ি করে পবিত্র কোরান হাতে লেখার সিদ্ধান্ত নেন। লেখালেখিও শুরু করেন। দেড় বছর চেষ্টার পর গত বছরের অক্টোবরে হাতে হাতে পুরো পবিত্র কোরআন লেখা শেষ করেন তিনি। হাফেজদের দিয়ে সংশোধন ও স্ক্যানিং ও প্রিন্টিংয়ের কাজও শেষ হয়েছে।
জারিন তাসনিম থাকেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে। তার ঘরে হাতে লেখা পবিত্র কোরআনের ৫০টি আবদ্ধ কপি রয়েছে। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন তিনি বিনামূল্যে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদে দিতে চান। পবিত্র কোরআনের ৫০ কপি তৈরির খরচ বহন করেন ব্যবসায়ী বাবা। সুলতানুল আলম। তবে তাসনিম বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদে বিনামূল্যে ৫০০ কপি দিতে চান। এ কাজে কেউ আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেই এটা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে কেউ কেউ যোগাযোগও করেছেন। জারিন তাসনীমও ফ্রি পিকআপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমি নিজের হাতে পবিত্র কোরআন লিখেছি ভালোবেসে। আমি কখনোই এই পবিত্র কোরআনের কপি বিক্রি করব না। তবে সবাইকে বিনামূল্যে উপহার দেওয়া সম্ভব নয়।
জারিন তাসনিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে মাস্টার্স করেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় বাড়িতে অন্যরা যেভাবে কোরআন তেলাওয়াত করত সেভাবে তিনি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তাসনিম মাদ্রাসায় পড়েননি। এমনকি পবিত্র কোরআনের হাফেজও নন
ভাইরাল হওয়ার জন্য আমি পবিত্র কোরআন হাতে লিখিনি। তবে এখন মনে হয়, আমার কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে পারে। আর আমি হাতে লেখা পবিত্র কোরআনকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে আমি না থাকলেও আমার কাজ মানুষের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কেউ পবিত্র কোরআন পাঠ করলেই আমার কষ্ট সার্থক হবে। ধর্মীয়ভাবে বলতে গেলে, এটা আমার পুরস্কার হবে। তিনি যখন পবিত্র কোরআন হাতে লিখে শেষ করেন এবং তার বাড়ির কাছের মাদ্রাসা নামে পরিচিত হাফেজিয়া মাদ্রাসার ওস্তাদদের সাথে কথা বলেন, তারা প্রথমে বিশ্বাস করেননি যে তিনি পুরো পবিত্র কোরআন হাতে লিখেছিলেন এবং এটা পড়তে পারে. জারিন তাসনিম তখন তাদের বাসায় এসে দেখতে বলেন। বাড়িতে এসে দেখেন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে। তখন তারা হাতে লেখা পবিত্র কোরআন সংশোধনের পরামর্শ দেন। পরে রাজধানীর হাজারীবাগের একটি মাদ্রাসার ৩০ জন হাফেজ হাতের লেখা পবিত্র কোরআনের কোথায় ভুল তা দেখিয়ে দেন। তাসনিম তা সংশোধন করে তাদের কাছে ফেরত পাঠান। প্রায় তিন মাস সময় লাগে। মাদ্রাসার হাফেজরা বিনা পয়সায় কাজটি করেছেন, পবিত্র কোরআনের প্রতিটি অক্ষর তাদের আঙুলে ধরে রাখা এবং দেখতে ও লিখতে খুবই কষ্ট হয়েছে বলে জানান জারিন তাসনিম। কিন্তু লেখা একটা নেশা হয়ে গেল। জারিন তাসনিম পবিত্র কোরআনের ৬৫১ পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপিরও যত্ন নিয়েছেন।
জারিন তাসনিমের বাড়ি জামালপুরে। তার আরেক বোন জেবা তাহসিন আইন বিষয়ে পড়ছেন। জারিন তাসনিম বলেন, তিনি যখন প্রথম দিকে তার বাবা-মা রেখা পারভীনকে পবিত্র কোরআন হাতে লিখতে বলেছিলেন, তখন তারা বিশ্বাস করতে পারেননি। একটি সূরা লিখে বাবাকে দেখালে তিনি তাকে লেখা শুরু করতে বলেন। আর লেখার সময় জারিন তাসনিম তার মাকে বলতেন লেখাটা পড়বে কি না সে বিষয়ে মতামত দিতে।
জারিন তাসনিম বলেন, ‘পরিকল্পনা করেই যে লেখা শুরু করেছি তা নয়। নীলক্ষেত থেকে কাগজ-কলম কিনে বাসায় এসে আবার ভাবলাম। তারপর ভাবলাম আগে শুরু করা যাক। যদি আমি শেষ করতে না পারি, আমি এটি করব না। ‘
জারিন তাসনীম বলেন, ‘আমি সূরা ফাতিহা লিখেছিলাম, প্রথমে লেখাটা ভালো বা ভালো লাগেনি। একটি পৃষ্ঠা লিখতে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। পরে ভাবলাম, করোনায় সব বন্ধ, সারাদিন বাসায় থাকি। লিখতে থাকি। একটি অনুচ্ছেদ লিখতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। 15 প্যারা লেখা শেষ। সারাদিন সময় পেলেই লিখতাম। আমি যেখানেই যেতাম, আমার সাথে আসল পবিত্র কোরআন এবং কাগজ-কলম নিয়ে যেতাম। আসলে, আমি লেখা শুরু করার পরে, আমি থামিনি। 20 টিরও বেশি অনুচ্ছেদ লেখার পরে, লেখার গতি বাড়ে। ‘
জারিন তাসনিম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে আমি আবার রাজনীতি করে পবিত্র কোরআন লিখেছি। আমি তাদের বলি, ধর্ম আমার নিজের কাজ। শালীনতা বজায় রাখা, মারামারি না করা, মিথ্যা বলা নয়—এসব শুধু ইসলামে বলা আছে, তা নয়। সব ধর্মই এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছে। বন্যা ত্রাণ বা যেকোন সামাজিক কাজের সাথেও জড়িত আছি। ‘বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরি খুঁজছেন জারিন তাসনিম।
জারিন তাসনিম বলেন, অনেকে পবিত্র কোরআন হাতে লেখা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যও করেন। অনেকেই সরাসরি বলছেন ভাইরাল হওয়ার জন্য তিনি এটা করেছেন। জারিন তাসনিম বলেন, ‘ভাইরাল হওয়ার জন্য আমি পবিত্র কোরআন হাতে লিখিনি। তবে এখন মনে হয়, আমার কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে পারে। আর হাতে লেখা পবিত্র কোরআন ছড়িয়ে দিতে চাই বিভিন্ন জায়গায়,