০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ফ্ল্যাট এবং গাড়ি গ্রাহকের মালিকানাধীন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • / ৭১০ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

আকাশনীল নামে একটি ই-কমার্স কোম্পানি খোলার আগে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমানের (২৯) কোনো সম্পদ ছিল না। তবে কোম্পানি খোলার দুই বছর পর ২০২১ সালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রায় ৩ কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেন তিনি। একই সঙ্গে দুটি গাড়িও কিনেছেন তিনি।

মশিউর রহমানের আয়ের তথ্য অনুসন্ধান করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মামলার জবানবন্দিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ২৬ জুন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান সিআইডি পরিদর্শক। জিহাদ হোসেন। মশিউরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার চন্দ্রবাজার গ্রামে। সিআইডির পরিদর্শক জিহাদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, আকাশনীল খোলার আগে মশিউর রহমানের ঢাকা বা ফরিদপুরে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পাওয়া যায়নি। তবে কম দামে পণ্য দেওয়ার ফাঁদে পড়ে অল্প সময়ে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন মশিউর। বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পাওয়া গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মশিউর রহমানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয় সেজন্য আদালতের নির্দেশে সিআইডি আবেদন করবে।

আকাশনীলের এমডি মশিউর রহমান গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০ মার্চ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেছেন, মশিউর রহমান হয়রানির শিকার।

সিআইডির প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী, মশিউর রহমান ২০১৯ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আকাশনীলের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পান। প্রথমে কাঁঠালের বাগানে অফিস ছিল। পরে কার্যালয়টি শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর করা হয়। আকাশনীল কম দামে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন। এভাবে ৩১ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্যের বরাত দিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা জেহাদ হোসেন জানান, ফরিদপুরে মশিউর রহমানের কোনো সম্পদ না থাকলেও ধানমন্ডির ১৩ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। 25 আগস্ট, 2021, মশিউর 29 মিলিয়ন টাকায় 1,748 বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তার নামে দুটি প্রাইভেট কার রয়েছে। এর মধ্যে একটির দাম ২৮ লাখ টাকা এবং অন্যটির দাম ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া তিনটি ব্যাংকে তার ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা রয়েছে।

মামলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মশিউর রহমান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ব্যবসায় নামেন। পোশাক সংগ্রহ করে নিউমার্কেট এলাকায় বিক্রি করতেন। পরে 2019 সালে তিনি আকাশনীল নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন। ওই বছরই তিনি একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে প্রচারণা শুরু করেন। দুই বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও কৃষিপণ্য বিক্রি করলেও ব্যবসায় তেমন সফলতা পাননি মশিউর। যাইহোক, 2021 সালের জুন থেকে, তিনি কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রি করতে সক্ষম হন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কোটি কোটি টাকা পাচার করেন।

মশিউরকে গ্রেপ্তারের পর, র‌্যাব ২১ মার্চ জানায়, ই-কমার্স কোম্পানি ‘আকাশনীল’ ‘ইভালি’ ও ‘ধামাকা শপিং’-এর ব্যবসা দেখে ২০২১ সালের মে মাসে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে। সাত মাসে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ২৩-৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানিটি। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার তৎকালীন পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মশিউর গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে দুবাই পালাতে চেয়েছিল। তার কাছ থেকে দুবাই যাওয়ার বিমানের টিকিট পাওয়া গেছে। মশিউরসহ আকাশনীল পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনি (৩২)কে আটক করা হয়। সেও জেলে।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, মশিউর ‘আকাশনীল’কে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও হলেও তার মা ছিলেন চেয়ারম্যান। আর স্ত্রীকে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা অংশীদার করা হয়। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরাও ছিলেন অন্যান্য পদে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ফ্ল্যাট এবং গাড়ি গ্রাহকের মালিকানাধীন

আপডেট সময় ১১:৫০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

আকাশনীল নামে একটি ই-কমার্স কোম্পানি খোলার আগে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমানের (২৯) কোনো সম্পদ ছিল না। তবে কোম্পানি খোলার দুই বছর পর ২০২১ সালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রায় ৩ কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেন তিনি। একই সঙ্গে দুটি গাড়িও কিনেছেন তিনি।

মশিউর রহমানের আয়ের তথ্য অনুসন্ধান করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মামলার জবানবন্দিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ২৬ জুন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান সিআইডি পরিদর্শক। জিহাদ হোসেন। মশিউরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার চন্দ্রবাজার গ্রামে। সিআইডির পরিদর্শক জিহাদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, আকাশনীল খোলার আগে মশিউর রহমানের ঢাকা বা ফরিদপুরে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পাওয়া যায়নি। তবে কম দামে পণ্য দেওয়ার ফাঁদে পড়ে অল্প সময়ে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন মশিউর। বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পাওয়া গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মশিউর রহমানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয় সেজন্য আদালতের নির্দেশে সিআইডি আবেদন করবে।

আকাশনীলের এমডি মশিউর রহমান গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০ মার্চ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেছেন, মশিউর রহমান হয়রানির শিকার।

সিআইডির প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী, মশিউর রহমান ২০১৯ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আকাশনীলের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পান। প্রথমে কাঁঠালের বাগানে অফিস ছিল। পরে কার্যালয়টি শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর করা হয়। আকাশনীল কম দামে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন। এভাবে ৩১ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্যের বরাত দিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা জেহাদ হোসেন জানান, ফরিদপুরে মশিউর রহমানের কোনো সম্পদ না থাকলেও ধানমন্ডির ১৩ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। 25 আগস্ট, 2021, মশিউর 29 মিলিয়ন টাকায় 1,748 বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তার নামে দুটি প্রাইভেট কার রয়েছে। এর মধ্যে একটির দাম ২৮ লাখ টাকা এবং অন্যটির দাম ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া তিনটি ব্যাংকে তার ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা রয়েছে।

মামলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মশিউর রহমান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ব্যবসায় নামেন। পোশাক সংগ্রহ করে নিউমার্কেট এলাকায় বিক্রি করতেন। পরে 2019 সালে তিনি আকাশনীল নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন। ওই বছরই তিনি একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে প্রচারণা শুরু করেন। দুই বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও কৃষিপণ্য বিক্রি করলেও ব্যবসায় তেমন সফলতা পাননি মশিউর। যাইহোক, 2021 সালের জুন থেকে, তিনি কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রি করতে সক্ষম হন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কোটি কোটি টাকা পাচার করেন।

মশিউরকে গ্রেপ্তারের পর, র‌্যাব ২১ মার্চ জানায়, ই-কমার্স কোম্পানি ‘আকাশনীল’ ‘ইভালি’ ও ‘ধামাকা শপিং’-এর ব্যবসা দেখে ২০২১ সালের মে মাসে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে। সাত মাসে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ২৩-৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানিটি। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার তৎকালীন পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মশিউর গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে দুবাই পালাতে চেয়েছিল। তার কাছ থেকে দুবাই যাওয়ার বিমানের টিকিট পাওয়া গেছে। মশিউরসহ আকাশনীল পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনি (৩২)কে আটক করা হয়। সেও জেলে।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, মশিউর ‘আকাশনীল’কে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও হলেও তার মা ছিলেন চেয়ারম্যান। আর স্ত্রীকে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা অংশীদার করা হয়। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরাও ছিলেন অন্যান্য পদে।