রাত আটটার পর শপিংমল খোলা রাখলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন: নসরুল
- আপডেট সময় ০৫:০০:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২
- / ৬৮৭ বার পড়া হয়েছে
জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সরকার সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট ও শপিংমল আটটায় বন্ধ করে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে।
এর আগে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চলমান জ্বালানি সংকট নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নসরুল হামিদ বলেন, ইউরোপের প্রতিটি দেশই জ্বালানি সংরক্ষণে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেউ কেউ জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছেন। এশিয়ার দেশগুলোও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। পুরো বিশ্ব এখন এক সংকটময় সময় পার করছে। এর প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
এর আগে ২০ জুন সারাদেশে সব ধরনের আলো জ্বালানো নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে শপিংমল, দোকানপাট রাত আটটার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এদিকে ঈদের কেনাকাটার জন্য শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধের সময় ১ থেকে ১০ জুলাই রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে আবারও রাত আটটায় বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে এলএনজি ও তেল আমদানি কমানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। জ্বালানির সরবরাহ কমলে বিদ্যুতের উৎপাদনও কমে যাবে। ঘাটতি মেটাতে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক ভিত্তিতে প্রতিদিন এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে।
টাকা বাঁচানোর কোনো বিকল্প আছে কি না জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, এখনই এসব সিদ্ধান্ত না নিলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে। ডিজেল থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে খরচ হয় ৩ টাকা। প্রতি ইউনিট 40। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিক্রি হয় সাড়ে পাঁচ টাকায়। এলএনজি কিনতে প্রতি ইউনিট খরচ হবে ৩৯ টাকা। গ্রাহকের কাছে এক ইউনিট গ্যাস বিক্রি করে গড়ে 9.50 টাকা আয় হয়। দাম স্থিতিশীল রেখে সরকারি ভর্তুকি বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। আপাতত জ্বালানির দাম বাড়ানোর কথা ভাবছে না সরকার।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে। তবে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে শিল্প লোডশেডিংয়ের বাইরে থাকবে। বিতরণ কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তালিকা করা শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বিশ্বাস করে যে সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এক ঘন্টা লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে 973 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যেতে পারে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডিজেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমতে পারে। এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক ঘণ্টায় কাজ না হলে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে ডিজেলের ব্যবহার ২০ শতাংশ কমানোর কথা ভাবছে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে ১০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয় করা যাবে। বাকি ৯০ শতাংশ পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হয়। এসব খাত থেকে ব্যবহার ১০ শতাংশ কমাতে হবে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার নির্দেশনা পাওয়া গেছে। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিপিসি।
জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের ফলে কত টাকা সাশ্রয় হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি হিসাব করে বিপিসি রিপোর্ট করবে।
জ্বালানি-সংকট পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে সরকারি অফিসের সময়সূচি দুই ঘণ্টা কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে নামাজের বাইরে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সরকারি অফিসের এসি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। সরকারি যানবাহনের ব্যবহার কমাতে অনলাইনে সব সভা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।