মোমেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলে চাপ বাড়ছে
- আপডেট সময় ০৬:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ অগাস্ট ২০২২
- / ১০৯৪ বার পড়া হয়েছে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সরকার ও আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। দলের বেশির ভাগ নেতাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ। মোমেনের বক্তব্যে কূটনৈতিকভাবে দেশের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা।
দেশের অভ্যন্তরেও সরকারের সমালোচনা হয়েছে। এ অবস্থায় মোমেনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দলের ভেতর থেকে চাপ বাড়ছে বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য। নেতাদের এ মনোভাব গত শুক্রবার দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দল ও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এ কে আবদুল মোমেনকে তিরস্কার ও সতর্ক করা হতে পারে। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তার বিরুদ্ধে বড় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায় থেকে পাওয়া যায়নি।
নীতিনির্ধারণী বিষয়ে দল ও সরকার সিদ্ধান্ত নেবে
তবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে আবদুল মোমেনের পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের বলে মনে করছেন মন্ত্রিসভা ও দলের একাংশ। তাই প্রধানমন্ত্রী তার ‘পছন্দ’কে বিপদে ফেলবেন বলে মনে করেন না তারা। তা ছাড়া আবদুল মোমেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিলে- তিনি অপরাধ করেছেন, তা মেনে নেওয়া হবে। দল ও সরকারের অনেকেই মনে করছেন, আগামী নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভায় রদবদলের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার তা করতে তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলো</em>কে বলেন, দলের ও সরকারের নীতিমালার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দল ও সরকারের বক্তব্য নয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ সরকার ও দলের ভাষণ নয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাধিক মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। সেখানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অধিকাংশ নেতা-মন্ত্রী। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান নেতাদের মনোভাব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য বন্ধুপ্রতীম দেশকে বিব্রত করবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের নেতারা নিরন্তর বলে আসছেন, জনগণই আওয়ামী লীগকে পর পর তিনবার ক্ষমতায় এনেছে। ‘ভারত নির্ভরতা’ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এতদিনের ক্ষমতাসীন দলের বক্তব্যকে উল্টে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সব কিছু জানেন। তিনি এ বিষয়ে দল ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিক নির্দেশনা দেবেন।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য প্রথম আলো</em>কে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারত কেন কোনো দেশের ওপর নির্ভর করে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান শনিবার বলেছেন, মোমেন দলের সদস্য নন। মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলো</em>কে বলেন, সারা বিশ্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রের দ্বিতীয় বা তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে কাউকে দলের কেউ না ডাকলে দায়িত্ব শেষ হয় না।
আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মোমেনের বক্তব্যে দলের নয়, অভ্যন্তরীণভাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানোর জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ করেছেন অনেক নেতা-মন্ত্রী। মোমেনের বক্তব্যের কারণে যে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকে বিপদে ঠেলে দেন না। লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রিত্ব ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আর মুরাদ হাসান বাদ পড়েছেন নারী সমাজকে বিপর্যস্ত করার কারণে। আবদুল মোমেনের বক্তব্যের কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নেবেন বলে মনে হয় না।